চায়ের অনিষ্টকারী পোকামাকড় ও এদের সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা
পোকামাকড়ের পরিচিতিঃ
চা বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসল ও রপ্তানী পণ্য। চা গাছ একটি বহুবর্ষজীবি চিরসবুজ উদ্ভিদ। চা গাছ বহুবর্ষজীবি ও একক চাষকৃত উদ্ভিদ হওয়ায় পোকা, মাকড়ের জন্য স্থায়ী গৌন আবহাওয়া ও তাদের বৃদ্ধির জন্য খাদ্য সরবরাহের একটি অন্যতম উৎস হিসেবে ভূমিকা পালন করে। চা উৎপাদনের যেসব অন্তরায় রয়েছে তাদের মধ্যে চায়ের ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গ, পোকামাকড় ও কৃমিপোকা অন্যতম। বাংলদেশ চায়ে এখন পর্যন্ত ২৫ প্রজাতির পতঙ্গ, ৪ প্রজাতির মাকড় ও ১০ প্রজাতির কৃমিপোকা সনাক্ত করা হয়েছে। তন্মধ্যে আবাদী এলাকায় চায়ের মশা, উঁইপোকা ও লালমাকড় এবং নার্সারী ও অপরিনত চা আবাদীতে এফিড, জেসিড, থ্রিপস, ফ্লাসওয়ার্ম ও কৃমিপোকা মুখ্য ক্ষতিকারক কীট হিসাবে পরিচিত। অনিস্টকারী এসব পোকামাকড় বছরে গড়ে প্রায় ১০-১৫% ক্ষতি করে থাকে। কোন কোন ক্ষেত্রে ১০০% ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এসব পোকামাকড়ের বিস্তার ও আক্রমনের তীব্রতা অনুসারে এদের মুখ্য অতবা গৌন কীট বলা হয়। তবে আজ চায়ে যে কীট মুখ্য কাল তা আবার গৌন হতে পারে। অপরদিকে কোন গৌন কীট মুখ্য কীটেও পরিনত হতে পারে। ক্ষতিকর এসব পোকামাকড়ের সঠিক দমন পদ্ধতি জানতে হলে এসব কীটপতঙ্গের সঙ্গে কিছুটা পরিচয় থাকা প্রয়োজন।
বৃহৎ অর্থে কীট বলতে সাধারনত: বিভিন্ন ধরনের পতঙ্গ, মাকড়, ইদুর, পাখী, আগাছা রোগবালাই ইত্যাদি অনিস্টকারী প্রাণি ও উদ্ভিদ বুঝায়। যে কোন ধরনের ফসল বা শস্য আবাদ করা হোক না কেন এসব ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ ফসল বিনস্ট করে থাকে।
পতঙ্গ (Insect): সাধারনত যে কীটে দু’জোড়া পাখা, তিন জোড়া পা, এবং দেহ, মাথা, বক্ষ ও উদর এ তিন অংশে বিভক্ত তাদেও পতঙ্গ বলে।
মাকড় (Mite): সাধারনত যে কীটের জীবনেপ্রাথমিক ধাপে তিন জোড়া ও পূর্ণাঙ্গ ধাপে চার জোড়া পা, কোন পাখা থাকেনা এবং দেহকে নির্দিষ্ট অংশে বিভক্ত করা যায় না তাদেরকে মাকড় বলে।
কৃমিপোকা (Nematode): মাটিতে বসবাসকারী অতিক্ষুদ্র, আনুবীক্ষনীক সূতা বা সেমাই আকৃতি প্রাণীকে কৃমিপোকা বলে।
চা যেহেতু বহুবর্ষজীবি ও একক চাষকৃত উদ্ভিদ তাই চায়ে আজ যে কীটপতঙ্গ গৌণ আপদ বলে পরিচিত কাল তা মুখ্য আপদ বলে বিবেচিত ও চা শিল্পের জন্য হুমকি হতে পারে। তবে যাই হোক, সমন্বিত পোকা দমন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমেই টেকসই ও পরিবেশ বান্ধব চা আবাদ করা সম্ভব যা এখন সময়ের দাবীও। কীটদমনের সর্বপ্রথম নীতি হলো-কীট পরিচিতি। চা আবাদীতে যে সব পোকা-মাকড়/বালাই সচরাচর আক্রমণ করে তাদের আকৃতি, প্রকৃতি ও জৈব প্রক্রিয়া ভিন্ন ধরনের। এদের আক্রমনের ফলে চা গাছের শিকড়, কান্ড, শাখা-প্রশাখা, পাতা পল্লব এবং বিভিন্ন অংশে ভিন্ন ধরনের লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা দেয়। এসব লক্ষণ বা উপসর্গ সনাক্ত করে পোকামাকড়/আপদ-বালাই পরোক্ষভাবে চিনতে পারা যায়।
আক্রান্ত গাছে আপদলক্ষণ/উপসর্গ:
চায়ের মুখ্য ক্ষতিকারক পোকামাকড়সমূহঃ
১) চায়ের মশা
ক্ষতির প্রকৃতিঃ চায়ের মশা একটি গুরুত্বপূর্ণ কীট। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, শ্রীলংকা, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, এবং আফ্রিকাতেও বিস্তৃত। চা ছাড়াও এটি কফি, কোকোয়া এবং কাজুবাদামের একটি গুরুত্বপূর্ণ কীট। চা বাগানে এটি টি-হেলোপেলটিস বা চায়ের মশা নামে পরিচিত। চায়ের এ শোষক পোকাটির পুরুষ ও স্ত্রী পোকার নিম্ফ ও পূর্ণাঙ্গ পতঙ্গ চায়ের কচি ডগা ও পাতার রস শোষণ করে এবং আক্রান্ত অংশ কালো হয়ে যায়। ব্যাপক আক্রমণে নতুন পাতা গজানো বন্ধ হয়ে যায়। এ পোকার আক্রমণে ১৫% শস্যক্ষতি হয়ে থাকে। তবে এদের আক্রমণ সকালে ও বিকেলে তীব্রতর থাকে। মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়া তাদের বংশবৃদ্ধিকে আরও ত্বরান্বিত করে। বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের প্রায় সব বাগানেই এ পোকার প্রাদুর্ভাব খুব বেশি দেখা যায়। চট্টগ্রামের চা বাগানগুলিতে এ পোকার আবির্ভাব খুব একটা নাই বললেই চলে। তবে পঞ্চগড় অঞ্চলের চা বাগানগুলিতে এ পোকার আক্রমণ পরিলক্ষিত হয়।
সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ
২) লাল মাকড়
ক্ষতির প্রকৃতিঃ চায়ের লাল মাকড় খুবই অনিস্টকারী। আকারে অতি ক্ষুদ্র। পরিনত পাতার উপর ও নীচ থেকে আক্রমন করে থাকে। রস শোষনের ফলে পাতার উভয় দিক তাম্রবর্ন ধারন করে এবং শুষ্ক ও বিবর্ন দেখায়। উপোর্যপুরি আক্রমনে সম্পূর্ন পাতা ঝরে যায় ও কিশলয় ক্ষীণ বা লিকলিকে হয়।
সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ
৩) থ্রিপস
ক্ষতির প্রকৃতিঃ থ্রিপ্স অতি ক্ষুদ্র বাদামী রংয়ের পোকা । নার্সারী ও অপরিনত চায়ের অন্যতম অনিষ্টকারী কীট। নার্সারী ও স্কিফ এলাকায় আক্রমন বেশী পরিলক্ষিত হয়। আবাদী এলাকায় ছাঁটাই উত্তর নতুন কিশলয়ে আক্রমন পরিলক্ষিত হয়। রস শোষণের ফলে পাতার উপরিভাগের মধ্যশিরার দু’পাশ্বে দুটি লম্বা শোষণ রেখা দেখা যায়।
সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ
৪) লুপার ক্যাটারপিলার
ক্ষতির প্রকৃতিঃ লুপার ক্যাটারপিলার চা আবাদীতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পাতা খেকো পোকা যা মারাত্মক শস্যক্ষতি করে থাকে। লুপার ক্যাটারপিলার মথের অপরিণত দশা (ক্যাটারপিলার)। ইহা চা গাছ ছাড়াও ছায়া তরু ও সবুজ শস্যের একটি ক্ষতিকারক কীট। এ পোকার অপরিণত দশাই চা গাছের পাতা ও কুড়ি খেয়ে ফেলে। অপরিনত ক্যাটারপিলার কচি পাতার কিনারা ছিদ্র করে এবং পরে কিনারা বরাবর খেতে থাকে। এটি আকারে যত বড় হতে থাকে পাতা খাওয়ার পরিমানও তত বাড়তে থাকে। এক সময় মধ্যশিরা বাদে সম্পূর্ণ পাতাই খেয়ে ফেলে। পূর্ণ বয়স্ক ক্যাটারপিলার পরিনত পাতা খেতে শুরু করে এবং আক্রমন ব্যাপক হলে পুরো গাছটি পাতাবিহীন হয়ে পড়ে। পূর্বে ইহা বাংলাদেশের চায়ের মুখ্য ক্ষতিকারক পোকা ছিল না। বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলের কিছু চা বাগানে ১৯৬৩ সালে এ পোকার ব্যাপক আক্রমন দেখা দিয়েছিল। পরবর্তীতে ভ্যালি সার্কেলগুলোর বিভিন্ন চা বাগানে প্রায়ই বিক্ষিপ্তভাবে এ কীটের আক্রমন দেখা যেত। সম্প্রতি অনেক চা বাগানে লুপার ক্যাটারপিলারের আক্রমন ব্যাপক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে পূর্বে যেখানে এ পোকাটি অজ্ঞাত ছিল। বর্তমানে দিনারপুর চা বাগান, বৃন্দাবন চা বাগান, জংগলবাড়ী চা বাগান, জেরিন চা বাগান এবং পঞ্চগড়ের স্যালিলান চা বাগানে লুপার ক্যাটারপিলারের মারাত্মক আক্রমন দেখা যায়। অনুমিত হচ্ছে ভবিষ্যতে চা শিল্পের জন্য এটি মুখ্য ক্ষতিকারক কীট হিসেবে গন্য হতে পারে। এদের প্রধান বৈশিষ্ট্য চলার সময় লুপ তৈরী করে চলে। পোকটি বহুভোজী। ছায়াতরু যেমন-বগামেডুলা, সাদা কড়ই, শীল কড়ই, কালো কড়ই, শিরীষ, কালো শিরীষ, ডেরিস, জারুল, অড়হর, কাঠ বাদাম এবং প্রায়োট্রপিস নামক সবুজ শস্য লুপার ক্যাটারপিলারের বিকল্প পোষক হিসেবে কাজ করে।
সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ
৫) এফিড
ক্ষতির প্রকৃতিঃ এদেরকে জাবপোকাও বলা হয়। নার্সারী ও অপরিনত চায়ের অন্যতম অনিষ্টকারী কীট। আবাদী এলাকায় ছাঁটাই উত্তর নতুন কিশলয়ে আক্রমন পরিলক্ষিত হয়। দলবদ্ধভাবে বিভিন্ন বয়সের এফিড চায়ের কচি ডগা ও কচি পাতার রস শুষে নেয়। তাই বৃদ্ধি ব্যহত হয়। এদের অবস্থানের পাশাপাশি কালো পিপড়া দেখা যায়। ডিসেম্বর-মার্চ মাস পর্যন্ত আক্রমন তীব্র থাকে।
সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ
৬) জেসিড
ক্ষতির প্রকৃতিঃ নার্সারী ও অপরিনত চায়ের অন্যতম অনিষ্টকারী কীট। আবাদী এলাকায় ছাঁটাই উত্তর নতুন কিশলয়ে আক্রমন পরিলক্ষিত হয়। এরা চায়ের পাতার রস শুষে নেয়। আক্রান্ত পাতা নৌকাকৃতি ধারন করে ও কিনারা শুকিয়ে যায়।
সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ
৭) আঁশ পোকা বা স্কেল
ক্ষতির প্রকৃতিঃ বাংলাদেশের চায়ে আঁশ পোকা (scale insect) একটি উল্লেখযোগ্য কীট। এটি চা গাছ ও কড়ই প্রজাতির ছায়াগাছকে আক্রমণ করে থাকে। এমনকি তুলা, কাঁঠাল, লেবু, জাম্বুরা, পেয়ারা, গোলাপ গাছও সমানভাবে আক্রমণ করে থাকে। এ পোকা বিভিন্ন আকৃতির মোম জাতীয় আবরণ নিঃসৃত করে এবং সে আবরণের নীচে বাস করে। শোষক অঙ্গ দ্বারা গাছের রস শোষণ করে খায়। চা বাগানে আঁশ পোকার অসংখ্য প্রজাতি রয়েছে। আঁশ পোকাগুলো ক্ষুদ্রাকৃতির। কচি কান্ডে বা পাতার নিচের দিকে মধ্য শিরা বরাবর ঝাঁকবেধে বাস করে। পরিণত স্ত্রী পোকাগুলো ডিম্বাকার, সচরাচর উত্তল, মাছের আঁশের মতো। আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে এবং রাসায়নিক কীটনাশকের ক্রমব্যবহারে নির্ভরতার কারণে এ পতঙ্গটি বর্তমানে চা বাগানে মুখ্য ক্ষতিকারক কীট হিসেবে দেখা দিচ্ছে।
সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ
এদের দমনে কৌশল অবলম্বন করতে হবে। যেহেতু পোকার দেহের চারিদিকে মোমজাতীয় পদার্থের আবরণ এবং অধিকাংশই পাতার নিচের দিকে অবস্থান করে তাই কীটনাশক দ্বারা এদের বিনষ্ট করা কষ্টসাধ্য। তাই এদের দমন করতে কমপক্ষে ২ রাউন্ড কন্টাক্ট ও সিস্টেমিক কীটনাশক একত্রে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। এখেত্রে হেক্টর প্রতি ১২৫ গ্রাম রেনোভা/একতারা ২৫ ডব্লিও জি (থায়ামেথোক্সাম) এবং ডেসিস ২.৫ ইসি (ডেল্টামেথ্রিন) ৫০০ লিটার পানিতে মিশিয়ে আক্রান্ত অংশ ভাল করে স্প্রে করতে হবে। তবে পাতার নিচের দিকে এবং কচি কান্ডে টার্গেট পয়েন্ট নির্ধারণ করতে হবে। ৭ দিন পর ২য় রাউন্ড স্প্রে করতে হবে। জৈবিক নিয়ন্ত্রণ এবং তৈল জাতীয় পদার্থের প্রয়োগও অধিক কার্যকরী। এসব তৈল জাতীয় পদার্থ প্রয়োগে পোকার শ্বসনে ব্যাঘাত ঘটায় ও মারা যায়।
৮) ফ্লাশওয়ার্ম
ক্ষতির প্রকৃতিঃ এরা মথ জাতীয় পতঙ্গের অপরিনত দশা। দেখতে লেদা পোকার মত। দু’টি পাতা ও একটি কুঁড়িকে গুটিয়ে পাটি-সাপটার মত মোড়ক তৈরী করে। মোড়কের ভিতরে থেকে কচি কিশলয় কুড়ে কুড়ে খায়। নার্সারী ও অপরিনত চাও আবাদী এলাকায় ছাঁটাই উত্তর নতুন কিশলয়ে এ সমস্যা ব্যপক।
সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ
৯) উইপোকা
ক্ষতির প্রকৃতিঃ উইপোকা মৌমাছির মতো সামাজিক পতঙ্গ। চা বাগানে 'উলুপোকা' নামে পরিচিত। এটা চায়ের অন্যতম মুখ্য ক্ষতিকারক কীট। চা গাছের মরা-পঁচা বা জীবন্ত অংশ খায়। এরা মাটিতে ও গাছের গুঁড়িতে ঢিবি তৈরি করে বাস করে। কেবলমাত্র শ্রমিক শ্রেণিই চা গাছ খেয়ে থাকে। রানী উইপোকার ডিম পাড়ার ক্ষমতা অত্যধিক। একটি রানী উইপোকা প্রতিদিন ৮৪,০০০ করে ডিম পাড়ে। উইপোকা গাছের কান্ড বা মাটির উপরিভাগে ভিতর থেকে গলিপথ বানিয়ে চলাচল করে। কুঁড়ে কুঁড়ে চা গাছ খায়।
সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ
১০) কৃমিপোকা
ক্ষতির প্রকৃতিঃ কৃমিপোকা নার্সারীর প্রধানতম পেষ্ট। এরা মাটিতে বাস করে। অতিক্ষুদ্র ও আণুবীক্ষণিক পোকা। দেখতে সূতা বা সেমাই আকৃতির। কচি শিকড়ের রস শোষণ করে। ফলে শিকড়ে গিট তৈরি হয়। আক্রমনে চারা দুর্বল ও রুগ্ন হয়। পাতা হলুদ ও বিবর্ণ দেখায়। চারার বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ
১১) উরচুঙ্গা
ক্ষতির প্রকৃতিঃ নার্সারি ও অপরিণত চা আবাদিতে উরচুঙ্গা বড় সমস্যা। মুখে শক্ত ও ধারাল দাঁত আছে। সামনের পা জোড়া খাঁজকাটা, চ্যাপ্টা কোদালের মতো। পায়ের এ অবস্থার কারণে ছোট চা-চারাকে ধরে সহজেই কেটে ফেলে। এরা নিশাচর পতঙ্গ। মাটিতে গর্ত করে থাকে এবং সন্ধ্যার পর বের হয়ে আসে।
সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ
এটা দমনে নার্সারি ও অপরিণত চা আবাদি এলাকার উরচুঙ্গার গর্তগুলো শনাক্ত করে গর্তের মুখে দুই চা চামচ পোড়া মবিল দিয়ে চিকন নলে পানি ঢেলে দিতে হবে। উরচুঙ্গা গর্ত থেকে বের হয়ে এলে লাঠি বা পায়ের আঘাতে মেরে ফেলতে হবে।
পোকামাকড়ের পরিচিতিঃ
চা বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসল ও রপ্তানী পণ্য। চা গাছ একটি বহুবর্ষজীবি চিরসবুজ উদ্ভিদ। চা গাছ বহুবর্ষজীবি ও একক চাষকৃত উদ্ভিদ হওয়ায় পোকা, মাকড়ের জন্য স্থায়ী গৌন আবহাওয়া ও তাদের বৃদ্ধির জন্য খাদ্য সরবরাহের একটি অন্যতম উৎস হিসেবে ভূমিকা পালন করে। চা উৎপাদনের যেসব অন্তরায় রয়েছে তাদের মধ্যে চায়ের ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গ, পোকামাকড় ও কৃমিপোকা অন্যতম। বাংলদেশ চায়ে এখন পর্যন্ত ২৫ প্রজাতির পতঙ্গ, ৪ প্রজাতির মাকড় ও ১০ প্রজাতির কৃমিপোকা সনাক্ত করা হয়েছে। তন্মধ্যে আবাদী এলাকায় চায়ের মশা, উঁইপোকা ও লালমাকড় এবং নার্সারী ও অপরিনত চা আবাদীতে এফিড, জেসিড, থ্রিপস, ফ্লাসওয়ার্ম ও কৃমিপোকা মুখ্য ক্ষতিকারক কীট হিসাবে পরিচিত। অনিস্টকারী এসব পোকামাকড় বছরে গড়ে প্রায় ১০-১৫% ক্ষতি করে থাকে। কোন কোন ক্ষেত্রে ১০০% ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এসব পোকামাকড়ের বিস্তার ও আক্রমনের তীব্রতা অনুসারে এদের মুখ্য অতবা গৌন কীট বলা হয়। তবে আজ চায়ে যে কীট মুখ্য কাল তা আবার গৌন হতে পারে। অপরদিকে কোন গৌন কীট মুখ্য কীটেও পরিনত হতে পারে। ক্ষতিকর এসব পোকামাকড়ের সঠিক দমন পদ্ধতি জানতে হলে এসব কীটপতঙ্গের সঙ্গে কিছুটা পরিচয় থাকা প্রয়োজন।
বৃহৎ অর্থে কীট বলতে সাধারনত: বিভিন্ন ধরনের পতঙ্গ, মাকড়, ইদুর, পাখী, আগাছা রোগবালাই ইত্যাদি অনিস্টকারী প্রাণি ও উদ্ভিদ বুঝায়। যে কোন ধরনের ফসল বা শস্য আবাদ করা হোক না কেন এসব ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ ফসল বিনস্ট করে থাকে।
পতঙ্গ (Insect): সাধারনত যে কীটে দু’জোড়া পাখা, তিন জোড়া পা, এবং দেহ, মাথা, বক্ষ ও উদর এ তিন অংশে বিভক্ত তাদেও পতঙ্গ বলে।
মাকড় (Mite): সাধারনত যে কীটের জীবনেপ্রাথমিক ধাপে তিন জোড়া ও পূর্ণাঙ্গ ধাপে চার জোড়া পা, কোন পাখা থাকেনা এবং দেহকে নির্দিষ্ট অংশে বিভক্ত করা যায় না তাদেরকে মাকড় বলে।
কৃমিপোকা (Nematode): মাটিতে বসবাসকারী অতিক্ষুদ্র, আনুবীক্ষনীক সূতা বা সেমাই আকৃতি প্রাণীকে কৃমিপোকা বলে।
চা যেহেতু বহুবর্ষজীবি ও একক চাষকৃত উদ্ভিদ তাই চায়ে আজ যে কীটপতঙ্গ গৌণ আপদ বলে পরিচিত কাল তা মুখ্য আপদ বলে বিবেচিত ও চা শিল্পের জন্য হুমকি হতে পারে। তবে যাই হোক, সমন্বিত পোকা দমন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমেই টেকসই ও পরিবেশ বান্ধব চা আবাদ করা সম্ভব যা এখন সময়ের দাবীও। কীটদমনের সর্বপ্রথম নীতি হলো-কীট পরিচিতি। চা আবাদীতে যে সব পোকা-মাকড়/বালাই সচরাচর আক্রমণ করে তাদের আকৃতি, প্রকৃতি ও জৈব প্রক্রিয়া ভিন্ন ধরনের। এদের আক্রমনের ফলে চা গাছের শিকড়, কান্ড, শাখা-প্রশাখা, পাতা পল্লব এবং বিভিন্ন অংশে ভিন্ন ধরনের লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা দেয়। এসব লক্ষণ বা উপসর্গ সনাক্ত করে পোকামাকড়/আপদ-বালাই পরোক্ষভাবে চিনতে পারা যায়।
আক্রান্ত গাছে আপদলক্ষণ/উপসর্গ:
- চা গাছে পরিপক্ক পাতার উপরিভাগ তামাটে রং হয়। পাতার মধ্যশিরায় লাল/বাদামী রং এর ছোট ছোট চিহ্ন দেখা যায়। পাতা বিবর্ণ ও শুষ্ক দেখায়। ক্রমে আক্রান্ত গাছের পাতা ঝরে যায়- লালমাকড়
- কচি পাতা হলুদ রং ধারন করে। পাতার কিনারা রৌদ্রে ঝলসানোর মতো দেখায় এবং পাতা কুকড়ে নৌকাকৃতি হয়-জেসিড
- পরিপক্ক পাতার মধ্যশিরার পাশ দিয়ে দুটি নীলাভ সমান্তরাল রেখা দেখা যায়। পাতার উপর সাদা রং এর ছোট ছোট ক্ষতচিহ্ন দেখা যায়- থ্রিপ্স
- কচি /পরিনত পাতা কিনারা থেকে এবরো থেবরো খাওয়ার চিহ্ন দেখা যায়। আক্রান্ত গাছের পাতা সম্পূর্ণ বিনস্ট হয়ে যায়-লুপার ক্যাটারপিলার
- কচি কিশলয় এর পাতা কোকরানো ও বিকৃত হয়। কালচে রং এর ছোট পোকা একত্রে গাদি হয়ে থাকে এবং সময়ে সময়ে কাল পিপড়ার আনাগোনা দেখা যায়-এফিড
- চায়ের ফ্লাশ অর্থাৎ দুটি পাতা ও কুড়িঁতে বাদামী রং এর ছোট ছোট ফোটা বা ক্ষত চিহ্ন দেখা দেয়। কচি পাতা বিবর্ণ হয়। কিশলয় কোকড়ানো এবং ডগা থেকে রস বাহির হয়। ফ্লাশের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়-হেলোপেল্টিস বা চায়ের মশা
- চায়ের ফ্লাশ একত্রে জড়িয়ে চোংগারমত গুটানো থাকে। বিবর্ণ ও বিকৃত চোংগার মধ্যে লেদা পোকা দেখা যায়- ফ্লাশওয়ার্ম
- পরিনত পাতার কিনারা থেকে গুটানো থাকে। পাতার উপরে কামড়ের বা ফুটা করে খাওয়ার চিহ্ন থাকে-লিফরোলার
- চা গাছের কান্ড, শাখা-প্রশাখায় মাটির সুড়ঙ্গ পথ ভুমি থেকে উপরে উঠতে দেখা যায়। গাছের বাকল ও মজ্জাধিয়ে অন্ত:সার শূন্য দেখা যায়- উঁইপোকা
- চা নার্সারী বা নতুন আবাদীতে কর্তিত চারা গাছ কেটে পড়ে থাকে। কাটা কিশলয়ে দেয়া ঢাকা মাটির গর্ত দেখা যায়। রাত্রিতে ঝিঝি ডাক শোনা যায়- উরচুঙ্গা
- চা অঙ্গজ-বিস্তার নার্সারীতে চারা মারা যায়। গাছের বাড়ন কমে যায়। পাতা বিবর্ণ, শুষ্ক ও হলুদ রং ধারণ করে। শিকড় জলাসিক্ত ও স্ফিত হতে পারে-নিমাটোড বা কৃমিপোকা
চায়ের মুখ্য ক্ষতিকারক পোকামাকড়সমূহঃ
১) চায়ের মশা
ক্ষতির প্রকৃতিঃ চায়ের মশা একটি গুরুত্বপূর্ণ কীট। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, শ্রীলংকা, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, এবং আফ্রিকাতেও বিস্তৃত। চা ছাড়াও এটি কফি, কোকোয়া এবং কাজুবাদামের একটি গুরুত্বপূর্ণ কীট। চা বাগানে এটি টি-হেলোপেলটিস বা চায়ের মশা নামে পরিচিত। চায়ের এ শোষক পোকাটির পুরুষ ও স্ত্রী পোকার নিম্ফ ও পূর্ণাঙ্গ পতঙ্গ চায়ের কচি ডগা ও পাতার রস শোষণ করে এবং আক্রান্ত অংশ কালো হয়ে যায়। ব্যাপক আক্রমণে নতুন পাতা গজানো বন্ধ হয়ে যায়। এ পোকার আক্রমণে ১৫% শস্যক্ষতি হয়ে থাকে। তবে এদের আক্রমণ সকালে ও বিকেলে তীব্রতর থাকে। মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়া তাদের বংশবৃদ্ধিকে আরও ত্বরান্বিত করে। বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের প্রায় সব বাগানেই এ পোকার প্রাদুর্ভাব খুব বেশি দেখা যায়। চট্টগ্রামের চা বাগানগুলিতে এ পোকার আবির্ভাব খুব একটা নাই বললেই চলে। তবে পঞ্চগড় অঞ্চলের চা বাগানগুলিতে এ পোকার আক্রমণ পরিলক্ষিত হয়।
সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ
- হেলোপেলটিস প্রতিরোধী জাত/ক্লোন ব্যবহার করে হবে। বিটি ১, বিটি ২, বিটি ৫, বিটি ৬, বিটি ১১ ও বিটি ১৩ জাতের ক্লোন হেলোপেলটিসের প্রতি যথেষ্ট সংবেদনশীল। বিটি ৮ জাতের ক্লোনটি তুলনামূলকভাবে কম সংবেদনশীল।
- হেলোপেলটিস আক্রান্ত সেকশনের ছায়াপ্রদানকারী গাছ সমূহের ডালপালা ছেঁটে দিতে হবে যাতে সেকশনে পর্যাপ্ত আলো বাতাস প্রবেশ করতে পারে।
- বিকল্প পোষক সমূহ যেমনঃ মিকানিয়া, সিনকোনা, কোকোয়া, পেয়ারা, কাঁঠাল, আম, মিস্টি আলু, রঙ্গন ইত্যাদি গাছ অপসারন করতে হবে। ও সেকশন অবশ্যই আগাছামুক্ত রাখতে হবে।
- প্লাকিং রাউন্ড অবশ্যই ৭-৮ দিন অনুসরণ করতে হবে।
- সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় পরিবেশবান্ধব ও নিরাপদ জৈব বালাইনাশক যেমন- নিম, মেহগিনি, বিষকাটালী, ভাট, ধুতুরা, ল্যান্টানা, ঘাঘরা ইত্যাদি গাছের নির্যাশ ব্যবহার করে চায়ের মশা দমন করা যায়।
- শুষ্ক মৌসুমে হেক্টর প্রতি ২.২৫ লি. হারে ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি ৫০০ লি. পানিতে মিশিয়ে ৭ দিন অন্তর স্প্রে করতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে স্প্রে অবশ্যই প্লাকিং এর পরের দিন করতে হবে।
- বর্ষা মৌসুমে হেক্টর প্রতি ৫০০ মি.লি. হারে রিপকর্ড ১০ ইসি অথবা এক্সিস ১০ ইসি অথবা রাইনেট ৪৫ ইসি অথবা ডেসিস ২.৫ ইসি অথবা ৩৭৫ মি.লি. হারে ক্যালিপ্সু ২৪০ এসসি অথবা ১৫০ গ্রাম হারে রেনোভা ২৫ ইসি অথবা ১৫০ মিলি হারে শেংলি ৩০ এসসি অথবা ২৫০ গ্রাম হারে তুন্দ্রা ২০ এসপি ৫০০ লি. পানিতে মিশিয়ে ৭ দিন অন্তর স্প্রে করতে হবে। ২য় রাউন্ড অবশ্যই ৭ দিনের মাথায় স্প্রে করতে হবে। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চায়ের মশা দমনে ব্যারিয়ার স্প্রেয়িং খুবই ফলপ্রসূ।
২) লাল মাকড়
ক্ষতির প্রকৃতিঃ চায়ের লাল মাকড় খুবই অনিস্টকারী। আকারে অতি ক্ষুদ্র। পরিনত পাতার উপর ও নীচ থেকে আক্রমন করে থাকে। রস শোষনের ফলে পাতার উভয় দিক তাম্রবর্ন ধারন করে এবং শুষ্ক ও বিবর্ন দেখায়। উপোর্যপুরি আক্রমনে সম্পূর্ন পাতা ঝরে যায় ও কিশলয় ক্ষীণ বা লিকলিকে হয়।
সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ
- লাল মাকড় আক্রান্ত অপরিণত সেকশনের আশেপাশে বিকল্প পোষক গাঁদা ফুল গাছ ফাঁদ হিসাবে লাগিয়ে আক্রমন কমানো যায়।
- সেকশন অবশ্যই আগাছামুক্ত রাখতে হবে।
- আক্রান্ত সেকশনে ছায়াপ্রদানকারী গাছ লাগাতে হবে।
- গবাদি পশুর বিচরন বন্ধ করতে হবে।
- রাস্তার পাশের বুশসমুহের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।
- অ্যামোনিয়াম সালফেট, ফসফেট ও পটাশ সার মাকড় দমনে সহায়ক।
- সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় পরিবেশবান্ধব ও নিরাপদ জৈব বালাইনাশক যেমন- নিম, মেহগিনি, বিষকাটালী, ভাট, ধুতুরা, ল্যান্টানা, ঘাঘরা ইত্যাদি গাছের নির্যাশ ব্যবহার করে চায়ের লাল মাকড় দমন করা যায়।
- প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসাবে প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে হেক্টর প্রতি ২.২৫ কেজি হারে সালফার ৮০ ডব্লিউ পি ১০০০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫-৬ দিন অন্তর স্প্রে করতে হবে। তবে সালফার জাতীয় মাকড়নাশক পড়ন্ত বিকেলে স্প্রে করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
- প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা হিসাবে হেক্টর প্রতি ১.০০ লিটার হারে ওমাইট ৫৭ ইসি অথবা জিরোমাইট ৪০ ইসি অথবা ৬০০ মিলি হারে ম্যাজিস্টার ১০ ইসি অথবা ৫০০ মিলি হারে মাইট স্ক্যাভেঞ্জার ১০ ইসি অথবা ৪০০ মিলি হারে ওবেরন ২৪০ এসসি ১০০০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৬-৭ দিন অন্তর স্প্রে করতে হবে।
- লাল মাকড় আক্রান্ত সেকশনে সিনথেটিক পাইরিথ্রয়েড জাতীয় কীটনাশক ব্যবহারে বিরত থাকুন কারন সিনথেটিক পাইরিথ্রয়েড লাল মাকড়ের প্রজনন ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।
৩) থ্রিপস
ক্ষতির প্রকৃতিঃ থ্রিপ্স অতি ক্ষুদ্র বাদামী রংয়ের পোকা । নার্সারী ও অপরিনত চায়ের অন্যতম অনিষ্টকারী কীট। নার্সারী ও স্কিফ এলাকায় আক্রমন বেশী পরিলক্ষিত হয়। আবাদী এলাকায় ছাঁটাই উত্তর নতুন কিশলয়ে আক্রমন পরিলক্ষিত হয়। রস শোষণের ফলে পাতার উপরিভাগের মধ্যশিরার দু’পাশ্বে দুটি লম্বা শোষণ রেখা দেখা যায়।
সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ
- আক্রান্ত সেকশনে পর্যাপ্ত ছায়াপ্রদানকারী গাছ লাগাতে হবে।
- সেকশন অবশ্যই আগাছামুক্ত রাখতে হবে।
- বায়োকন্ট্রল এজেন্ট হিসেবে লেডি বার্ড বিটল ও মাকড়শা ব্যবহার করেও থ্রিপ্স দমন করা যায়।
- আবাদীতে প্লাকিং রাউন্ড অবশ্যই ৭-৮ দিন অনুসরণ করতে হবে।
- হেক্টর প্রতি ১.০ লি. হারে ইন্টাপ্রিড ১০ এসসি অথবা কুইনালফস ২৫ ইসি অথবা ইমিডাক্লোপ্রিড ২০ এসএল ২৫০ মিলি হারে ৫০০ লি. পানিতে মিশিয়ে ৭ দিন অন্তর ২ বার স্প্রে করতে হবে। কচি ডগা ও কচি পাতার নিচে স্প্রে করতে হবে।
৪) লুপার ক্যাটারপিলার
ক্ষতির প্রকৃতিঃ লুপার ক্যাটারপিলার চা আবাদীতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পাতা খেকো পোকা যা মারাত্মক শস্যক্ষতি করে থাকে। লুপার ক্যাটারপিলার মথের অপরিণত দশা (ক্যাটারপিলার)। ইহা চা গাছ ছাড়াও ছায়া তরু ও সবুজ শস্যের একটি ক্ষতিকারক কীট। এ পোকার অপরিণত দশাই চা গাছের পাতা ও কুড়ি খেয়ে ফেলে। অপরিনত ক্যাটারপিলার কচি পাতার কিনারা ছিদ্র করে এবং পরে কিনারা বরাবর খেতে থাকে। এটি আকারে যত বড় হতে থাকে পাতা খাওয়ার পরিমানও তত বাড়তে থাকে। এক সময় মধ্যশিরা বাদে সম্পূর্ণ পাতাই খেয়ে ফেলে। পূর্ণ বয়স্ক ক্যাটারপিলার পরিনত পাতা খেতে শুরু করে এবং আক্রমন ব্যাপক হলে পুরো গাছটি পাতাবিহীন হয়ে পড়ে। পূর্বে ইহা বাংলাদেশের চায়ের মুখ্য ক্ষতিকারক পোকা ছিল না। বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলের কিছু চা বাগানে ১৯৬৩ সালে এ পোকার ব্যাপক আক্রমন দেখা দিয়েছিল। পরবর্তীতে ভ্যালি সার্কেলগুলোর বিভিন্ন চা বাগানে প্রায়ই বিক্ষিপ্তভাবে এ কীটের আক্রমন দেখা যেত। সম্প্রতি অনেক চা বাগানে লুপার ক্যাটারপিলারের আক্রমন ব্যাপক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে পূর্বে যেখানে এ পোকাটি অজ্ঞাত ছিল। বর্তমানে দিনারপুর চা বাগান, বৃন্দাবন চা বাগান, জংগলবাড়ী চা বাগান, জেরিন চা বাগান এবং পঞ্চগড়ের স্যালিলান চা বাগানে লুপার ক্যাটারপিলারের মারাত্মক আক্রমন দেখা যায়। অনুমিত হচ্ছে ভবিষ্যতে চা শিল্পের জন্য এটি মুখ্য ক্ষতিকারক কীট হিসেবে গন্য হতে পারে। এদের প্রধান বৈশিষ্ট্য চলার সময় লুপ তৈরী করে চলে। পোকটি বহুভোজী। ছায়াতরু যেমন-বগামেডুলা, সাদা কড়ই, শীল কড়ই, কালো কড়ই, শিরীষ, কালো শিরীষ, ডেরিস, জারুল, অড়হর, কাঠ বাদাম এবং প্রায়োট্রপিস নামক সবুজ শস্য লুপার ক্যাটারপিলারের বিকল্প পোষক হিসেবে কাজ করে।
সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ
- হাত বাছাইঃ লুপার দমনে হাত বাছাই উত্তম পদ্ধতি। আক্রমন কম হলে ক্যাটারপিলার হাত দিযে সংগ্রহ করে মেরে ফেলা যায়। শীতকালে প্রুনিং সময়ে বিশেষকরে যেসমস্ত সেকশন ফর্কিং করা হয় সেখান থেকে কোকুন সংগ্রহ করা যেতে পারে।
- পূর্ণাঙ্গ মথ ধ্বংস করাঃ উৎপাদন মৌসুমের শুরুতে অর্থাৎ র্ফেরুয়ারী-মার্চ মাসের দিকে পূর্ণাঙ্গ মথ চা গাছ, ছায়া গাছ বা চা এলাকা সংলগ্ন অন্যান্য গাছ বিশেষ করে বাঁশ ঝাড়ে পাখা প্রসারিত করে বিশ্রামরত অবস্থায় থাকে। এরূপ মথের উপস্থিতি দেখা গেলে এ সময় বাঁশের মাথায় ঝাড়– বেধে পিটিয়ে এদেরকে মারা যেতে পারে।
- ফাঁদ ব্যবহারঃ হলুদ ফাঁদ ক্যাটারপিলারের মথকে অকৃষ্ট করে থাকে। তাই হলুদ ফাঁদ ব্যবহার করে পূর্ণাঙ্গ মথ দমন করা যায়। ফ্লোরোসেন্ট আলোক ফাঁদ ব্যবহার করেও এ মথ দমন করা যেতে পারে। পূর্ণাঙ্গ মথ পরিস্ফোটনরে মৌসুমে এগুলোকে সেট করা যেতে পারে। এই ফাঁদগুলো পোকার উপস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং দমনের মাধ্যম হিসেবে খুবই উপকারী।
- বিকল্প পোষক কমানোঃ লুপার ক্যাটারপিলারের বিকল্প পোষক যেমন ছায়াগাছ যেমন- বগামেডুলা, সাদা কড়ই, শীল কড়ই, কালো কড়ই, শিরীষ, কালো শিরীষ, ডেরিস, জারুল, অড়হর, কাঠ বাদাম এবং অপরিণত চায়ে রোপনকৃত প্রায়োট্রপিস নামক সবুজ শস্য থাকলে সেখানে নজর দিতে হবে।
- রাসায়নিক দমনঃ রাসায়নিক স্প্রে অপরিণত ক্যাটারপিলার দমনে বেশ কার্যকরী কিন্তু পরিণত ক্যাটারপিলার দমনে তেমন কার্যকরী নয়। আক্রমন বেশী হলে ৫০০ মিলি হারে রিপকর্ড ১০ ইসি অথবা ৫০০ মিলি হারে ডেসিস ২.৫ ইসি অথবা ২.২৫ লি হারে ডাইমেথিয়ন ৪০ ইসি অথবা ৫০০ মিলি হারে কুইনালফস ২৫ ইসি ৫০০ লি. পানিতে মিশিয়ে সম্পূর্ণ গাছ ও মাটিতে সিঞ্চন করতে হবে। সিঞ্চন অবশ্যই পড়ন্ত বিকেলে করা উচিত। তবে সন্তোষজনক দমনের জন্য ৭ দিনের মধ্যে অবশ্যই ২য় দফা সিঞ্চন করা বাঞ্চনীয়। চা গাছের উপরের এবং মাঝের ক্যানোপির কচি ও পরিণত পাতায় সিঞ্চন করতে হবে। অবশ্যই পাতা চয়নের পর পরই সিঞ্চন করতে হবে।
৫) এফিড
ক্ষতির প্রকৃতিঃ এদেরকে জাবপোকাও বলা হয়। নার্সারী ও অপরিনত চায়ের অন্যতম অনিষ্টকারী কীট। আবাদী এলাকায় ছাঁটাই উত্তর নতুন কিশলয়ে আক্রমন পরিলক্ষিত হয়। দলবদ্ধভাবে বিভিন্ন বয়সের এফিড চায়ের কচি ডগা ও কচি পাতার রস শুষে নেয়। তাই বৃদ্ধি ব্যহত হয়। এদের অবস্থানের পাশাপাশি কালো পিপড়া দেখা যায়। ডিসেম্বর-মার্চ মাস পর্যন্ত আক্রমন তীব্র থাকে।
সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ
- নার্সারীতে হাত বাছাই উত্তম পদ্ধতি।
- আবাদীতে প্লাকিং রাউন্ড অবশ্যই ৭-৮ দিন অনুসরণ করতে হবে।
- বায়োকন্ট্রল এজেন্ট হিসেবে লেডি বার্ড বিটল ব্যবহার করেও এফিড কমানো যায়।
- হেক্টর প্রতি ৫০০ মি.লি. হারে রিপকর্ড ১০ ইসি ৫০০ লি. পানিতে মিশিয়ে ৭ দিন অন্তর স্প্রে করতে হবে। তবে কচি ডগা ও কচি পাতার নিচে স্প্রে করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
৬) জেসিড
ক্ষতির প্রকৃতিঃ নার্সারী ও অপরিনত চায়ের অন্যতম অনিষ্টকারী কীট। আবাদী এলাকায় ছাঁটাই উত্তর নতুন কিশলয়ে আক্রমন পরিলক্ষিত হয়। এরা চায়ের পাতার রস শুষে নেয়। আক্রান্ত পাতা নৌকাকৃতি ধারন করে ও কিনারা শুকিয়ে যায়।
সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ
- আক্রান্ত সেকশনে পর্যাপ্ত ছায়াপ্রদানকারী গাছ লাগাতে হবে।
- সেকশন অবশ্যই আগাছামুক্ত রাখতে হবে।
- প্লাকিং রাউন্ড অবশ্যই ৭-৮ দিন অনুসরণ করতে হবে।
- হেক্টরপ্রতি ১.৫ লিটার হারে ৫০০ মিলিলিটার হারে রিপকর্ড ১০ ইসি অথবা ৫০০ গ্রাম হারে এসাটাফ ৭৫ এসপি ৫০০ লি. পানিতে মিশিয়ে ৭ দিন অন্তর স্প্রে করতে হবে। কচি ডগা ও কচি পাতার নিচে স্প্রে করতে হবে।
৭) আঁশ পোকা বা স্কেল
ক্ষতির প্রকৃতিঃ বাংলাদেশের চায়ে আঁশ পোকা (scale insect) একটি উল্লেখযোগ্য কীট। এটি চা গাছ ও কড়ই প্রজাতির ছায়াগাছকে আক্রমণ করে থাকে। এমনকি তুলা, কাঁঠাল, লেবু, জাম্বুরা, পেয়ারা, গোলাপ গাছও সমানভাবে আক্রমণ করে থাকে। এ পোকা বিভিন্ন আকৃতির মোম জাতীয় আবরণ নিঃসৃত করে এবং সে আবরণের নীচে বাস করে। শোষক অঙ্গ দ্বারা গাছের রস শোষণ করে খায়। চা বাগানে আঁশ পোকার অসংখ্য প্রজাতি রয়েছে। আঁশ পোকাগুলো ক্ষুদ্রাকৃতির। কচি কান্ডে বা পাতার নিচের দিকে মধ্য শিরা বরাবর ঝাঁকবেধে বাস করে। পরিণত স্ত্রী পোকাগুলো ডিম্বাকার, সচরাচর উত্তল, মাছের আঁশের মতো। আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে এবং রাসায়নিক কীটনাশকের ক্রমব্যবহারে নির্ভরতার কারণে এ পতঙ্গটি বর্তমানে চা বাগানে মুখ্য ক্ষতিকারক কীট হিসেবে দেখা দিচ্ছে।
সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ
এদের দমনে কৌশল অবলম্বন করতে হবে। যেহেতু পোকার দেহের চারিদিকে মোমজাতীয় পদার্থের আবরণ এবং অধিকাংশই পাতার নিচের দিকে অবস্থান করে তাই কীটনাশক দ্বারা এদের বিনষ্ট করা কষ্টসাধ্য। তাই এদের দমন করতে কমপক্ষে ২ রাউন্ড কন্টাক্ট ও সিস্টেমিক কীটনাশক একত্রে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। এখেত্রে হেক্টর প্রতি ১২৫ গ্রাম রেনোভা/একতারা ২৫ ডব্লিও জি (থায়ামেথোক্সাম) এবং ডেসিস ২.৫ ইসি (ডেল্টামেথ্রিন) ৫০০ লিটার পানিতে মিশিয়ে আক্রান্ত অংশ ভাল করে স্প্রে করতে হবে। তবে পাতার নিচের দিকে এবং কচি কান্ডে টার্গেট পয়েন্ট নির্ধারণ করতে হবে। ৭ দিন পর ২য় রাউন্ড স্প্রে করতে হবে। জৈবিক নিয়ন্ত্রণ এবং তৈল জাতীয় পদার্থের প্রয়োগও অধিক কার্যকরী। এসব তৈল জাতীয় পদার্থ প্রয়োগে পোকার শ্বসনে ব্যাঘাত ঘটায় ও মারা যায়।
৮) ফ্লাশওয়ার্ম
ক্ষতির প্রকৃতিঃ এরা মথ জাতীয় পতঙ্গের অপরিনত দশা। দেখতে লেদা পোকার মত। দু’টি পাতা ও একটি কুঁড়িকে গুটিয়ে পাটি-সাপটার মত মোড়ক তৈরী করে। মোড়কের ভিতরে থেকে কচি কিশলয় কুড়ে কুড়ে খায়। নার্সারী ও অপরিনত চাও আবাদী এলাকায় ছাঁটাই উত্তর নতুন কিশলয়ে এ সমস্যা ব্যপক।
সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ
- হাত বাছাই উত্তম পদ্ধতি। হাত বাছাই করে মোড়ক অংশটি বিনষ্ট করলে কীড়াটি মারা যাবে।
- দমনে কোন কীটনাশক ব্যবহার না করাই ভাল।
৯) উইপোকা
ক্ষতির প্রকৃতিঃ উইপোকা মৌমাছির মতো সামাজিক পতঙ্গ। চা বাগানে 'উলুপোকা' নামে পরিচিত। এটা চায়ের অন্যতম মুখ্য ক্ষতিকারক কীট। চা গাছের মরা-পঁচা বা জীবন্ত অংশ খায়। এরা মাটিতে ও গাছের গুঁড়িতে ঢিবি তৈরি করে বাস করে। কেবলমাত্র শ্রমিক শ্রেণিই চা গাছ খেয়ে থাকে। রানী উইপোকার ডিম পাড়ার ক্ষমতা অত্যধিক। একটি রানী উইপোকা প্রতিদিন ৮৪,০০০ করে ডিম পাড়ে। উইপোকা গাছের কান্ড বা মাটির উপরিভাগে ভিতর থেকে গলিপথ বানিয়ে চলাচল করে। কুঁড়ে কুঁড়ে চা গাছ খায়।
সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ
- উঁইপোকা প্রতিরোধী জাত/ক্লোন নির্বাচন করতে হবে। মনিপুরী বা মনিপুরী-চায়না হাইব্রিড জাত অথবা বিটি ৪, বিটি ৬, বিটি ৭ ও বিটি ৮ ক্লোন উঁইপোকা প্রতিরোধী জাত। বিটি ১০ ও বিটি ১১ ক্লোনদ্বয় উঁইপোকার প্রতি বেশ সংবেদনশীল।
- তিন বছরের প্রুনিং চক্র (লাইট প্রুনিং-ডীপ স্কীফ-লাইট স্কীফ) উঁইপোকার প্রার্দুভাব কমাতে সাহায্য করে।
- খাবার ফাঁদ যেমন- মরা বাঁশের খন্ড, নরম কাঠ, বগামেডুলা ব্যবহার করে উইপোকার আবির্ভাব সনাক্তকরণ ও ধ্বংস করতে হবে।
- উইপোকার রানী সংগ্রহ করে মেরে ফেলতে হবে। এতে বংশবৃদ্ধি ব্যাহত হবে।
- বেশ কিছু উপকারী পোকা আছে যারা উইপোকা ধরে খায়, এদের চা বাগানে সংরক্ষণ করতে হবে।
- হেক্টর প্রতি ১.৫ লিটার হারে এডমায়ার ২০০ এসএল/রিজেন্ট ৫০ এসসি অথবা ১০ লিটার হারে ডার্সবান ২০ ইসি ১০০০ লিটার পানিতে মিশিয়ে গাছের গোড়ায় ভালভাবে স্প্রে করতে হবে। স্প্রে করার পূর্বে গাছের গোড়ায় হালকা ফর্কিং করে নিলে ভাল ফল পাওয়া যাবে। গাছ প্রতি ১৫০-২০০ মিলি সলিউশন ভালভাবে স্প্রে করে দিতে হবে।
১০) কৃমিপোকা
ক্ষতির প্রকৃতিঃ কৃমিপোকা নার্সারীর প্রধানতম পেষ্ট। এরা মাটিতে বাস করে। অতিক্ষুদ্র ও আণুবীক্ষণিক পোকা। দেখতে সূতা বা সেমাই আকৃতির। কচি শিকড়ের রস শোষণ করে। ফলে শিকড়ে গিট তৈরি হয়। আক্রমনে চারা দুর্বল ও রুগ্ন হয়। পাতা হলুদ ও বিবর্ণ দেখায়। চারার বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ
- ৬০-৬৫˙সে. তাপমাত্রায় নার্সারির মাটি তাপ দিয়ে এ পোকা দমন করা যায়। এক্ষেত্রে বিটিআরআই কর্তৃক উদ্ভাবিত সয়েল স্টেরিলাইজিং যন্ত্র ব্যবহার করা যেতে পারে।
- গাছ প্রতি ২৫০ গ্রাম হারে নিম কেক প্রয়োগ করেও ভাল পাওয়া যায়।
- এছাড়া প্রতি ১ ঘনমিটার মাটিতে ফুরাডান (কারবোফুরান) ৫ জি ১৬৫ গ্রাম হারে অথবা গুলি (ফিপ্রোনিল) ৩ জিআর অথবা ৭০ গ্রাম হারে ফারটেরা (রাইনাক্সাপির) ০.৪ জি অথবা ১৫০ গ্রাম হারে রাগবী (কেডুসাফস) ১০ জি প্রয়োগ করে কৃমিপোকা দমন করা যায়।
- নার্সারীর মাটিতে গুয়াতেমালা ও সাইট্রোনেলা গাছ লাগিয়ে পর্যায়ক্রমে তা লপিং করে মাটিতে নেমাটোডের সংখ্যা সন্ধিক্ষণ মাত্রার নিচে রাখা সম্ভব।
১১) উরচুঙ্গা
ক্ষতির প্রকৃতিঃ নার্সারি ও অপরিণত চা আবাদিতে উরচুঙ্গা বড় সমস্যা। মুখে শক্ত ও ধারাল দাঁত আছে। সামনের পা জোড়া খাঁজকাটা, চ্যাপ্টা কোদালের মতো। পায়ের এ অবস্থার কারণে ছোট চা-চারাকে ধরে সহজেই কেটে ফেলে। এরা নিশাচর পতঙ্গ। মাটিতে গর্ত করে থাকে এবং সন্ধ্যার পর বের হয়ে আসে।
সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ
এটা দমনে নার্সারি ও অপরিণত চা আবাদি এলাকার উরচুঙ্গার গর্তগুলো শনাক্ত করে গর্তের মুখে দুই চা চামচ পোড়া মবিল দিয়ে চিকন নলে পানি ঢেলে দিতে হবে। উরচুঙ্গা গর্ত থেকে বের হয়ে এলে লাঠি বা পায়ের আঘাতে মেরে ফেলতে হবে।
|
|