নার্সারী ব্যবস্থাপনাঃ
মাঠ পর্যায়ে চা আবাদের জন্য তৎপূর্বে নার্সারীতে চারা উৎপাদন একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। চা আবাদীর জন্য বীজ ও কাটিং উভয় হতে চারা উৎপাদন করা যায়। বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্য হলো যথা সম্ভব স্বল্প সময়ে কম খরচে নির্দিষ্ট জাতের সুস্থ সবল, সজীব ও একই আকার আকৃতির চারা তৈরি করা। চা এর বীজ ও কাটিং উভয় হতে তৈরি চারার মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি ও বিস্তার প্রনালী হলো নার্সারী ব্যবস্থাপনার অন্তর্গত।
ভিপি নার্সারী/ ক্লোন নার্সারীঃ শুট তথা ডালপালার সবুজ অংশ হতে বংশবৃদ্ধি করার প্রক্রিয়া এর অন্তর্গত।
বীজ নার্সারীঃ বীজ হতে বংশ বৃদ্ধি করার প্রক্রিয়া এর অন্তর্গত।
ভিপি নার্সারী/ ক্লোন নার্সারীর উদ্দেশ্যঃ কান্ড তথা ডালপালার সবুজ অংশ হতে বংশবৃদ্ধি করার উদ্দেশ্য হলো নির্বাচিত গাছ হতে ফলন ও গুণগত মানের দিক হতে সমগুন সম্পন্ন চারা তৈরি করা।
পরিকল্পনাঃ
(১) মাঠে রোপনের উপযুক্ত চা চারা পেতে হলে এর ১৫-১৮ মাস আগেই কর্মপরিকল্পনা হাতে নিতে হয়।
(২) যে পরিমান চা চারা দরকার তার মোট পরিমান নির্ধারন করা দরকার।
(৩) প্রয়োজনীয় পরিমানের অতিরিক্ত ২৫-৩০% চা চারা তৈরি করতে হয়।
(৪) রোগ-বালাই মুক্ত বীজ ও কাটিং নির্ভরযোগ্য উৎস হতে সংগ্রহ নিশ্চিত করতে হয়।
(৫) মোট যে পরিমান চারা তৈরি করা দরকার ও তার জন্য মোট কি পরিমান জায়গার দরকার হতে পারে তাহা আগেই সুনিশ্চিত করা দরকার।
(৬) কি পরিমান পলিথিন দরকার হতে পারে তার পরিমানও নির্ধারন করা ও অগ্রিম সংগ্রহের ব্যবস্থা করা দরকার।
(৭) কি পরিমান শ্রমিক ও অন্যান্য দ্রব্যাদির দরকার হতে পারে তার পরিমান নির্ধারণ করা ও এর জন্য প্রয়োজনীয় খরচের পরিমান নির্ধারণ করাও দরকার।
(৮) প্রয়োজনীয় পরিমান ফানজিসাইড ও ইনসেকটিসাইড এর পরিমান নির্ধারণ করা ও সংগ্রহের ব্যবস্থা করা।
নার্সারীর জন্য জায়গা নির্ধারণঃ
(১) লোকেশন/অবস্থানঃ নার্সারী সর্বদাই প্রস্তাবিত চা আবাদীর কাছাকাছি করা ভাল। এতে মাঠে চারা পরিবহনের অতিরিক্ত খরচ ও ঝামেলা এড়ানো সম্ভব।
(২) পানির উৎসঃ সারা বছর পানি পাওয়া যায় এমন পানির উৎসের কাছাকাছি নার্সারী করা দরকার।
(৩) টপো-সিকোয়েন্সঃ জলাবদ্ধতার সম্ভবনা নাই এমন সমতল অথচ উচুঁ জায়গা নার্সারীর জন্য উপযুক্ত। তবে ঢালু হলে ১০ ডিগ্রী এর কম ঢালে নার্সারী করা যেতে পারে, ঢাল ১০ ডিগ্রী এর বেশী হলে উক্ত জায়গায় নার্সারী করা ঠিক হবে না ।
(৪) ভেজিটেশনঃ যেখানে সবুজ গাছপালা/ঘাস ভাল জন্মে সেখানে অন্য যে কোনো ফসলও ভাল জন্মে । অনুরুপ জায়গায় চায়ের নার্সারীও ভালভাবে করা সম্ভব।
(৫) ড্রেনেজঃ সুনিষ্কাশিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা আছে, বৃষ্টির পানি বের হয়ে যাওয়ার জন্য আউটলেটের ব্যবস্থা আছে, এমন জায়গা নার্সারীর জন্য উপযুক্ত।
(৬) মৃত্তিকার গুনাগুনঃ নার্সারীর জন্য বেলে দোআঁশ মাটি উপযুক্ত । তবে বালির আধিক্য বেশী (৭০%-৯০%) এমন জায়গায় চা নার্সারী ভালভাবে করা সম্ভব নহে।
(৭) ক্যাটল ট্রেসপাসঃ নার্সারী এলাকায় গরু ছাগলের অবাধ বিচরণ রোগবালাই ছড়ানোসহ নানাবিধ সমস্যা তৈরি করে।
(৮) মুক্ত আলো-বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা আছে এমন জায়গা নার্সারীর জন্য খুবই উপযুক্ত।
জমি তৈরিঃ
(১) জংগল পরিস্কারঃ জংগল বা আগাছা থাকলে শিকড়সহ তুলে ফেলে পরিস্কার করতে হয়।
(২) জমি কর্ষণঃ প্রাইমারী বেড তৈরির ক্ষেত্রে ০-৯ ইঞ্চি পর্যন্ত মাটি কোদাল দ্বারা ওলটপালট করে কর্ষিতাবস্থার সৃষ্টি করতে হয়।
(৩) লেভেলিংঃ বেড তৈরির আগে মাটি ড্রেসিং করে লেভেল করা চাই।
ডিজাইন এবং লেআউটঃ
(১) প্রাইমারী বেডঃ মোট কাটিং এর পরিমান অনুযায়ী ৩ইঞ্চি x ৩ইঞ্চি স্পেসিং দিয়ে দিয়ে লাগানোর ক্ষেত্রে কতটি প্রাইমারী বেড লাগতে পারে তা নির্ধারণ করা ও স্টেকিং করা।
(২) কি পরিমাণ সেকেন্ডারী বেড দরকার হতে পারে তাও নির্ধারণ করা চাই।
(৩) ড্রেনের প্রশস্থতা, গভীরতা ও প্রয়োজনীয় পথের পরিমান স্টেকিং করা, মোট প্রয়োজনীয় কাটিংএর পরিমান ও রোপন দুরত্ব অনুযায়ী প্রতিটি বেডে কি পরিমান কাটিং লাগানো সম্ভব তাও নির্ধারণ করা চাই।
(৪) বীজ নার্সারীঃ এর ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পরিমান বীজের জন্য বেডের পরিমাণ নির্ধারণ ও প্রতিটি সিড বেডে কতটি গুটি বা বীজ লাগানো সম্ভব তাও নির্ধারণ করা দরকার।
(৫) প্রয়োজনীয় অন্যান্য বিষয় ও বিবেচনায় আনা।
প্রাইমারী বেড ও সেকেন্ডারী বেড তৈরিঃ
(১) ক্লোন নার্সারী বেড অর্থাৎ কাটিং লাগানোর বেড সর্বদাই উত্তর দক্ষিন দিক বরাবর তৈরি করতে হয়। প্রাইমারী বেড তৈরি করার সময় লক্ষ্য রাখা দরকার যেন সঠিক ভাবে দুরমুজ করা হয়।
(২) গুটি নার্সারীর বেড পূর্ব-পশ্চিম দিক বরাবর তৈরি করতে হয়।
(৩) প্রাইমারী বেড শীতকালে ফ্লাট/সমতল এবং বৃষ্টির মৌসুমে ওভাল বা উত্তল আকৃতির করে তৈরি করতে হয়।
(৪) সেকেন্ডারী বেড পূর্বদিকে সামান্য ২ ইঞ্চির মত স্লানটিং বা ঢালু করে তৈরি করতে হয়।
(৫) সেকেন্ডারী বেড এর উপর ১ ইঞ্চির মত বালির স্তর দিলে সহজে জলাবদ্ধতা এড়ানো যায়।
(৬) সাইড ড্রেন ৩০ সেমি. (১ফুট) প্রশস্থ ও ২৩ সেমি. (৯ইঞ্চি) গভীর করে তৈরি করা দরকার।
ওভারশেড তৈরিঃ
(১) নার্সারীর জন্য ওভারশেড তৈরি একটি অপরিহার্য বিষয়।
(২) প্রাইমারী বেডে ব্যবহৃত বাঁশের চাপ্টা এমনভাবে তৈরি করতে হয়, যাতে ২০-২৫% সূর্যালোক বেডে প্রবেশ করতে পারে ।
(৩) বাঁশের চাপ্টা ৫ ফুট x ৪ ফুট সাইজের হওয়া চাই। চাপ্টা এর থেকে বেশী লম্বা হলে রক্ষণাবেক্ষনে এ সমস্যা হওয়ায় চাপ্টা বেশদিন টেকসই হয় না । এইরুপ ১৩টি চাপ্টা দিয়ে ৫০ ফুট লম্বা একটি বেড ঢাকানো সম্ভব।
(৪) সরাসরি মাটিতে লাগানো বীজ নার্সারীর জন্য সবুজ ছায়া শস্য হিসাবে বগামেডিওলা প্রত্যেক বেডের বর্ডার বরাবর লাগানো যায়।
(৫) প্রাইমারী বেডে বাঁশের চাপ্টা ২৫-৩০ সে.মি. (১০-১২ ইঞ্চি) উঁচুতে (লোশেড হাইট) এবং সেকেন্ডারী বেডে বাঁশের চাপ্টা ড্রেন হতে ১৭৮ সে.মি. (৬ ফুট) উচুতে (হাই শেড হাইট স্থাপন করতে হয়।
(৬) সেকেন্ডারী বেডে বাঁশের চাপ্টা ছাড়াও কাঁশসন বা এগ্রোনেট ব্যবহার করা যায়।
মাটি সংগ্রহঃ
(১) বাঁশবাড়ী বা জংগলবাড়ি হতে সংগৃহিত মাটি, বা যে কোন পূনর্বাসন করা ঝুরঝুরে মাটি উত্তম।
(২) বেলে দোঁআশ মাটি উত্তম এবং এক্ষেত্রে টপ সয়েল ব্যাগ ভর্তির জন্য উত্তম।
(৩) ক্র্যাম্ভি স্ট্রাকচারড সয়েল ভাল ।
(৪) পিএইচ ৪.৫ হতে ৫.৫ হলে ভাল হয়।
(৫) মাটি সংগ্রহের জন্য উত্তম সময় হল শীতকাল।
(৬) ইলওয়ার্ম এর সংখ্যা ১০ গ্রাম মাটিতে ৭টির বেশী হলে ফুরাডান দিয়ে মাটি শোধন করে নেওয়া দরকার।
মাটি তৈরিঃ
(১) মাটি শুকনা ও পরিস্কার হওয়া দরকার।
(২) প্রয়োজনে মাটি ৩ মেসের চালুনী দ্বারা চেলে নেয়া যায়।
(৩) সয়েল ও গোবর এর অনুপাত ৪ঃ১ হওয়া দরকার।
(৪) ব্যাগ ভর্তির জন্য সংগৃহিত মাটি তৈরির সময় প্রতি কিউবিক মিটার মাটিতে ৫০০ গ্রাম টিএসপি সার ব্যবহার করা যায় ।
ব্যাগ ভর্তিঃ
(১) পলিব্যাগের সাইজ ০.০৪ মিমি থিকনেস x ১৫সে.মি. প্রশস্থ x ২২ সে.মি. লম্বা অথবা ০.০৪ মিমি x ১২.৫ সে.মি. x ২০ সে.মি. আকারের পলিব্যাগ ব্যবহার করা যায়।
(২) ব্যাগ ভর্তির পূর্বে মাটি শুকনা হলে কিছুটা আর্দ্র করে নেয়া দরকার । কাটিং ট্রান্সফারের অন্তত ১৫-১৬ দিন আগে ব্যাগ ভর্তি করে রাখলে, ও মাঝে মাঝে পানি দিলে মাটি সেটিং হওয়া সহ অবাঞ্জিত আগাছা বীজ জন্মানোর সুযোগ হয় যা পলিব্যাগে কাটিং বসানোর সময় সহজভাবে দুরিভুত করা সম্ভব হয় ।
(৩) তৈরিকৃত মাটি দ্বারা ব্যাগ ভর্তির সময় ব্যাগের উপরাংশে ৫ সে.মি. খালি রেখে পরবর্তীতে সাবসয়েল দ্বারা ভর্তি করা দরকার এতে কাটিং হতে শিকড় বেড় হওয়ার পর গোবর ও সার মিশ্রিত মাটি নিচের দিকে থাকায় শিকড় নিম্নমুখী হয়, যাহা কাম্য ।
(৪) রংগিন পলিথিন তাপ শোষন করে দ্রুত গরম হয় ফলে ব্যাগের মাটি তাড়াতাড়ি শুকায়ে যায়, এইজন্য পলিব্যাগ হিসাবে রংগিন পলিথিন ব্যবহার না করাই ভাল ।
(৭) পলিথিন টিউব বসানোর সময় ত্রিকোনাকার সিস্টেমে বসালে ব্যাগের মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গার পরিমান সহজেই কমানো যায়, এতে সামগ্রীকভাবে নার্সারীর বেডকে শুকিয়ে যাওয়ার হাত হতে রক্ষা করা যায় ।
কাটিং তৈরি ও রোপণ
শুট সংগ্রহঃ
(১) নিউক্লিয়াস ক্লোন প্লট হতে স্ট্যান্ডার্ড শুট সংগ্রহের পরপরই আর্দ্র শীতল ছায়াময় জায়গায় রাখতে হয় ও মাঝে মাঝে পানি দেয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হয় ।
(২) আধা শক্ত আধা বাদামী ডাল বা শুট কাটিং সংগ্রহের এর জন্য উপযুক্ত ।
(৩) কাটিং সর্বদাই প্রাইমারী শুট হতে সংগ্রহ করতে হয়। সেকেন্ডারী বা টারশিয়ারী শুট হতে সংগৃহীত কাটিং কখনই ভাল হয় না ।
(৪) শুট সংগ্রহের উপযুক্ত সময় হল সকাল অথবা বিকাল ।
(৫) মাদারবুশ হতে শুট সংগ্রহের জন্য ধারালো দা ব্যবহার করতে হয় ।
কাটিং তৈরিঃ
(১) সুপ্ত কুড়ি সম্পন্ন ডাল হতে কাটিং সংগ্রহ করতে হয় ।
(২) কাটিং এর কুঁড়িটিকে রক্ষা করতে যতটুকু উপরে কাটতে হয়, ঠিক অতটুকু উপরে রেখে কাটা দরকার।
(৩) কাটিং এর দৈর্ঘ্য মধ্যপর্বের দৈর্ঘ্যরে উপর নির্ভর করে । একটি আদর্শ কাটিং ২.৫-৩.০ সে.মি. লম্বা হওয়া দরকার।
(৪) নার্সারীর জন্য কাটিং সংগ্রহের উপযুক্ত সময় হল এপ্রিল/মে এবং সেপ্টেম্বর/অক্টোবর।
কাটিং সংরক্ষণঃ
(১) সংগৃহিত কাটিং বোল বা গামলায় ভিজা সিক্ত অবস্থায় সাময়িকভাবে সংরক্ষণ করে রাখা যায়। পরিবহন করে দুরে নেয়ার ক্ষেত্রে সংগৃহীত কাটিং ভিজা সিক্ত চটের বস্তা অথবা ছিদ্রযুক্ত পলিথিন ব্যাগে ভিজাসিক্ত অবস্থায় পরিবহন করে নেয়া যায় । এভাবে সংগৃহীত কাটিং সর্বোচ্চ ৭২ ঘন্টা পর্যন্ত সংরক্ষণ করে লাগানো যায়।
কাটিং রোপনঃ
(১) যদিও কাটিং সংগ্রহের পর হতে সর্বোচ্চ ৭২ ঘন্টা পর্যন্ত লাগানো যায়, উত্তম হল সংগৃহীত কাটিং যথাসম্ভব দ্রুত লাগানো ।
(২) কাটিং লাগানোর আগে ২% ফানজিসাইডে শোধন করে নেয়া ভাল ।
(৩) কাটিং লাগানোর উত্তম সময় হল সকাল অথবা বিকাল ।
(৪) সরাসরি পলিব্যাগে লাগানোর ক্ষেত্রে বিশেষ করে প্রয়োজন পরিমান পানি প্রদানসহ সহ অন্যান্য বিষয়ে সতর্ক থাকতে হয়।
(৫) কাটিং লাগানোর সময় দৃঢ়ভাবে স্থাপন করতে হয়, লক্ষ্য রাখতে হয় যেন কোন এয়ার পকেট না থাকে ।
(৬) কাটিং এমনভাবে লাগাতে হয় যেন কাটিং এর বোটা বা পেটিওল মাটির ওপরে থাকে। বোটা মাটির নিচে গেলে পঁচে যেতে পারে ।
(৭) ক্লোন নার্সারী বেড সর্বদাই উত্তর-দক্ষিণ বরাবর লাগাতে হয়।
(৮) তৈরি বেড শুকনা হলে কাটিং লাগানোর পূর্র্বে অবশ্যই পানি দ্বারা সিক্ত করে নিতে হবে।
(৯) কাটিং ৩ইঞ্চি x ৩ইঞ্চি স্পেসিং দিয়ে লাগাতে হয়।
কাটিং স্থানান্তরঃ
(১) বেডে লাগানো কাটিং এর নিম্নাংশে ক্যালাসিং হচ্ছে কি না তা পর্যবেক্ষণ করা, এর জন্য ৬-১০ সপ্তাহ সময় লাগে ।
(২) শুট এর বৃদ্ধি ৭-১০ সে.মি. তথা ৩-৪ পাতা এবং একই সাথে শিকড়ের বৃদ্ধি ২-৩ সেমি হলে পলিব্যাগে নেয়ার উপযুক্ত হয়েছে বলে ধরে নেয়া হয়। সাধারণত এতে ৪-৬ মাস সময় লাগে।
(৩) লোহার তৈরি ফর্মা দিয়ে প্রাইমারি বেড হতে কাটিং এমনভাবে ট্রান্সফার করতে হয় যেন কাটিং এর গোড়ার মাটি বল /ভেটি/পিন্ডি না ভাংগে ।
(৪) ভেটি ভেংগে গেলে শিকড় ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় উক্ত কাটিংকে ব্যাগে টিকানো কঠিন হয়ে পড়ে। পুনঃবৃদ্ধি দেরীতে শুরু হয়।
মেইনটিন্যান্সঃ
(১) নিয়মিত পানি দেয়া দরকার।
(২) বেড অথবা ব্যাগ হতে মাটি ওয়াস আউট হলে সাথে সাথে পুনরায় মাটি দিয়ে সমান করে দেয়া দরকার ।
(৩) প্রয়োজন মাফিক উইডিং করা দরকার ।
(৪) অ্যালজি বা মস হলে, বা হার্ড ক্রাস্ট তৈরি হলে বাঁশের কাঠি দিয়ে হ্যান্ড ফর্কিং করে দুর করা যায়।
(৫) প্রাইমারী বেডের ড্রেনে অতিরিক্ত পানি যাতে কোন অবস্থাতেই জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে ।
(৬) প্রাইমারী বেডে ডাইব্যাকের আক্রমণ হতে পারে, উঁইপোকার আক্রমণ হতে পারে, এছাড়া উড়চুংগা পোকা কাটিং এর গোড়া কেটে দিতে পারে । শেডের অপ্রতুলতার কারণে লালমাকড়ের আক্রমণ হতে পারে, মাকড় দমনের জন্য মাইটিসাইড ব্যবহার করতে হবে ।
(৭) ক্লাব ক্যালাসিং এর কারণ হলো অতিরিক্ত মৃত্তিকা পিএইচ, ওভার ওয়াটারিং, অতিরিক্ত অরগানিক ম্যাটার, ওভার শেড, ক্লেই সয়েল। এটি প্রতিকারের উপায় হলো মৃত্তিকা পিএইচ কমানো, প্রয়োজনমাফিক ওয়াটারিং করা, প্রয়োজনমাফিক অরগানিক ম্যাটার ব্যবহার করা , শেড কন্ট্রোল করা, ক্লেই সয়েল ওয়াটারিং যাতে বেশী না হয়।
(৮) ফ্রি ফ্লাওয়ারিং সাধারণত অক্টোবার ও নভেম্বার মাসে সংগৃহিত কাটিং যা মাতৃপত্র ঝরে পড়া কাটিং এর কান্ড প্রাইমারীবেড সঠিকভাবে দুরমুজ না করেই রোপন করা, পত্রবোটাসহ কাটিং মাটির ভিতরে স্থাপন করা, সংগৃহীত কাটিং অহেতুক দেরী করে রোপন করা ।
হার্ডেনিংঃ
চা চারা রোপনের পূর্বে মাঠে রোপন উপযোগী করার জন্য হার্ডেনিং বা চারা শক্ত করে নেয়া একটা অত্যন্ত গুরুত্ব পূর্ণ প্রক্রিয়া । এইজন্য চা চারা রোপনের দেড় হতে দুই মাস পূর্বে শেড উম্মুক্ত করে চারা হার্ডেনিং করে নিতে হয় ।
বীজ নার্সারী
প্রাকৃতিক পরাগায়ণের মাধ্যমে সৃষ্ট বীজ থেকেই চায়ের বংশবিস্তার একটি প্রাচীন আবাদ পদ্ধতি। বীজ থেকে চারা তৈরি করা সহজ। তবে বিটিআরআই অনুমোদিত উন্নতজাতের বীজ থেকে চারা তৈরি করা উচিত।
বীজ সংগ্রহঃ
চা বীজ নিজস্ব বীজবাড়ি (গুটিবাড়ি) হতে বীজ পরিপক্কতার উপর অক্টোবর হতে ডিসেম্বর পর্যন্ত সংগ্রহ করা যায়। শুধুমাত্র অনুমোদিত চা বাগান হতে বীজ সংগ্রহ করতে হবে। যেহেতু খুব তাড়াতাড়ি চা বীজের অঙ্কুরোদ্গম ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়, তাই বীজ সংগ্রহের পর বাছাইয়ের পরই ভাল বীজ যত দ্রুত সম্ভব প্রথমে বীজঘরে সংরক্ষণ ও অঙ্কুরোদগমের জন্য পরিষ্কার ও অল্প ভেজা বালুর গাঁদায় রাখতে হবে।
বীজতলা তৈরিঃ
বীজতলার জমি ৩০ সেমি (১ ফুট) গভীরে চেষে নরম করে ও আগাছা পরিষ্কার করে নিতে হবে। এরপর পরিকল্পনা অনুযায়ী বীজতলা বা বেড তৈরি করতে হবে। ১২০ সেমি -১৫০ সেমি (৪-৫ ফুট) চওড়া এবং যে কোন সুবিধাজনক দৈর্ঘের বেড তৈরি করা যায়। তবে কাজের সুবিধার্থে বেডের পাশ যেন ১৫০ সেমি (৫ ফুট) এর বেশি না হয়। ৩০ মি x ১.৫ মি (৯৮ ফুট x ৫ ফুট) আকারের একটি বেডে ২০ সেমি x ২০সেমি ত্রিভুজাকৃতি ব্যবধানে প্রায় ১,৩০০ বীজ (প্রায় ৪ কেজি) লাগানো যায়। পানি নিষ্কাশনের জন্য বেডে চারদিকে ৩০ সেমি (১ ফুট) চওড়া ও ২০-২২ সেমি (৯ ইঞ্চি) গভীর নালা কেটে দিতে হবে। নার্সারীর চারদিকেও গভীর নালা রাখতে হবে যেন বর্ষায় পানি না জমে।
বীজতলায় বীজ বপনঃ
সংগৃহীত বীজ বীজঘরে বালুতে রাখার পর মাঝে মাঝে পরিমাণ মত পানি দিতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন খুব বেশি পানি না দেওয়া হয়। এতে বীজ পচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না। বালুতে রাখার ৭/৮ দিন পর পর অঙ্কুরিত বা ফেটে যাওয়া বীজ নার্সারীতে লাগাতে হবে। বেডে আঙ্গুল বা অনুরুপ শক্ত কাঠি দিয়ে চেপে অল্প গর্ত করে বীজের চোখগুলো মাটির নিচের দিকে রেখে এমনভাবে বীজ লাগাতে হবে যেন বীজ ১.০-১.৫ সেমি অর্থাৎ আধা ইঞ্চি মাটির নিচে থাকে। তারপর হালকাভাবে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। বীজ বপনের পর বীজতলা শুকনো ছন বা ঘাসপাতা দিয়ে হালকা করে ঢেকে দিতে হবে। বেড শুকিয়ে আসলে মাঝেমধ্যে পানি দিতে হবে। বীজতলা সম্পুর্ন আগাছামুক্ত রাখতে হবে। চা বীজ সরাসরি পলিথিনের বিকল্প উপযোগী ও অনুমোদিত উপকরণের ব্যাগেও লাগানো যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে ১৫ সেমি x ১৫ সেমি (৬ x ৬ ইঞ্চি) মাপের ব্যাগে ৪ ভাগ মাটির সঙ্গে ১ ভাগ পচা শুকনা গোবর ভালভাবে মিশিয়ে ব্যাগ ভর্তি করে বীজ রোপণ করতে হবে।
বীজতলায় ছায়া প্রদানঃ
বীজতলায় ছায়া প্রদান আবশ্যক। প্রতিটি বেডে ৬০-৭০ সেমি (২-২.৫ ফুট) উঁচুতে ছন বা বাঁশের চাপ্টা দিয়ে ছায়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এরুপ সরাসরি রোপণযোগ্য নার্সারির জন্য ১৫০-১৮০ সেমি (৫-৬ ফুট) উঁচুতে শেডের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এছাড়া ব্যায় কমানোর জন্য বাঁশের শেডের পরিবর্তে প্রতি বেড অন্তর বগামেডুলা গ্রীন ক্রপের সারি তৈরি করেও ছায়াদান নিশ্চিত করা যেতে পারে।
বীজতলায় সার প্রয়োগঃ
বীজ নার্সারীর চারার বৃদ্ধি ও সজীবতার জন্য রাসায়নিক সার (ইউরিয়া, টিএসপি ও এমওপি) ২ঃ১ঃ২ অনুপাতে প্রয়োগ করা যেতে পারে। সারের পরিমাণ ও প্রয়োগবিধি নিচে দেয়া হলঃ
ইউরিয়া ৪ কেজি + টিএসপি ২ কেজি + এমওপি ৪ কেজি = মোট ১০ কেজির সাথে শুকনো বালু ৯০ কেজি সর্বমোট ১০০ কেজির মিশ্রণ তৈরি করে উক্ত মিশ্রণ থেকে ১ কেজি করে ৩০ সেমি x ১.৫ মি বেডে ১৫ দিন পর পর মোট ১০ বার প্রয়োগ করা যেতে পারে। নার্সারিতে চারাগুলো ৪/৫ পাতা হওয়ার পর সার প্রয়োগ করতে হবে। পলিব্যাগের ক্ষেত্রে, ১ চা চামচ পরিমাণ সার ও বালুর মিশ্রণ প্রতি ব্যাগে ১৫ দিন পর পর ৮/১০ বার প্রয়োগ করা যাবে।
ছায়াতরু নার্সারী
চা বাগানে ছায়াগাছ উত্তোলন একটি অবিচ্ছেদ্য প্রক্রিয়া। বিটিআরআই অনুমোদিত যেমন- কালশিরিষ (আলবিজিয়া অডোরাটিসিমা), শীল কড়ই (আলবিজিয়া লেবেক), লোহা শিরীষ (ডেরিস রোবাস্টা) প্রজাতির স্থায়ী ছায়াগাছ হিসেবে নার্সারী চারা তৈরি পুর্বক চা বাগানে লাগানো যায়। সাধারণত নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে বীজ সংগ্রহ পূর্বক ছায়াগাছের চারা উত্তোলন করতে হয়।
নার্সারীতে ব্যাগে স্থায়ী ছায়াগাছের চারা তৈরিঃ
চায়ের মাটির মত নার্সারী ব্যাগে ছায়াগাছের জন্য মাটি ভরাট করতে হয়। ৩০ সেমি লম্বা ৩০০ গেজ মোটা অনুমোদিত পলিথিনের দুই মুখ খোলা ব্যাগও ব্যবহার করা যায়। প্রতি ব্যাগে ৩টি বীজ রোপণ করতে হবে। চারাগুলি ১০-১৫ সেমি লম্বা হওয়ার পর ১টি চারা রেখে বাকীগুলো উঠিয়ে ফেলতে হবে।
প্রাথমিক বেডে স্থায়ী ছায়াগাছের চারা তৈরিঃ
উপযুক্ত স্থানে প্রথমে ভালভাবে চাষ করে জমি তৈরি করতে হবে। মার্চ/এপ্রিল মাসে ৩০ সেমি দূরে সারি করে ৮ সেমি দূরত্বে এবং ১.২৫ সেমি মাটির নিচে স্থায়ী ছায়াগাছের বীজ বুনতে হবে, এরপর চারা কিছুটা বড় হলে সারির ভিতর ৩২ সেমি ব্যবধানের চারাগুলো রেখে বাকীগুলো উঠিয়ে ফেলতে হবে। মাঝে মাঝে পানি সিঞ্চন ও আগাছে পরিষ্কার করতে হবে। ১-১.৫ বৎসরের মধ্যে চারা মাঠে রোপণের ব্যবস্থা করতে হবে
মাঠ পর্যায়ে চা আবাদের জন্য তৎপূর্বে নার্সারীতে চারা উৎপাদন একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। চা আবাদীর জন্য বীজ ও কাটিং উভয় হতে চারা উৎপাদন করা যায়। বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্য হলো যথা সম্ভব স্বল্প সময়ে কম খরচে নির্দিষ্ট জাতের সুস্থ সবল, সজীব ও একই আকার আকৃতির চারা তৈরি করা। চা এর বীজ ও কাটিং উভয় হতে তৈরি চারার মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি ও বিস্তার প্রনালী হলো নার্সারী ব্যবস্থাপনার অন্তর্গত।
ভিপি নার্সারী/ ক্লোন নার্সারীঃ শুট তথা ডালপালার সবুজ অংশ হতে বংশবৃদ্ধি করার প্রক্রিয়া এর অন্তর্গত।
বীজ নার্সারীঃ বীজ হতে বংশ বৃদ্ধি করার প্রক্রিয়া এর অন্তর্গত।
ভিপি নার্সারী/ ক্লোন নার্সারীর উদ্দেশ্যঃ কান্ড তথা ডালপালার সবুজ অংশ হতে বংশবৃদ্ধি করার উদ্দেশ্য হলো নির্বাচিত গাছ হতে ফলন ও গুণগত মানের দিক হতে সমগুন সম্পন্ন চারা তৈরি করা।
পরিকল্পনাঃ
(১) মাঠে রোপনের উপযুক্ত চা চারা পেতে হলে এর ১৫-১৮ মাস আগেই কর্মপরিকল্পনা হাতে নিতে হয়।
(২) যে পরিমান চা চারা দরকার তার মোট পরিমান নির্ধারন করা দরকার।
(৩) প্রয়োজনীয় পরিমানের অতিরিক্ত ২৫-৩০% চা চারা তৈরি করতে হয়।
(৪) রোগ-বালাই মুক্ত বীজ ও কাটিং নির্ভরযোগ্য উৎস হতে সংগ্রহ নিশ্চিত করতে হয়।
(৫) মোট যে পরিমান চারা তৈরি করা দরকার ও তার জন্য মোট কি পরিমান জায়গার দরকার হতে পারে তাহা আগেই সুনিশ্চিত করা দরকার।
(৬) কি পরিমান পলিথিন দরকার হতে পারে তার পরিমানও নির্ধারন করা ও অগ্রিম সংগ্রহের ব্যবস্থা করা দরকার।
(৭) কি পরিমান শ্রমিক ও অন্যান্য দ্রব্যাদির দরকার হতে পারে তার পরিমান নির্ধারণ করা ও এর জন্য প্রয়োজনীয় খরচের পরিমান নির্ধারণ করাও দরকার।
(৮) প্রয়োজনীয় পরিমান ফানজিসাইড ও ইনসেকটিসাইড এর পরিমান নির্ধারণ করা ও সংগ্রহের ব্যবস্থা করা।
নার্সারীর জন্য জায়গা নির্ধারণঃ
(১) লোকেশন/অবস্থানঃ নার্সারী সর্বদাই প্রস্তাবিত চা আবাদীর কাছাকাছি করা ভাল। এতে মাঠে চারা পরিবহনের অতিরিক্ত খরচ ও ঝামেলা এড়ানো সম্ভব।
(২) পানির উৎসঃ সারা বছর পানি পাওয়া যায় এমন পানির উৎসের কাছাকাছি নার্সারী করা দরকার।
(৩) টপো-সিকোয়েন্সঃ জলাবদ্ধতার সম্ভবনা নাই এমন সমতল অথচ উচুঁ জায়গা নার্সারীর জন্য উপযুক্ত। তবে ঢালু হলে ১০ ডিগ্রী এর কম ঢালে নার্সারী করা যেতে পারে, ঢাল ১০ ডিগ্রী এর বেশী হলে উক্ত জায়গায় নার্সারী করা ঠিক হবে না ।
(৪) ভেজিটেশনঃ যেখানে সবুজ গাছপালা/ঘাস ভাল জন্মে সেখানে অন্য যে কোনো ফসলও ভাল জন্মে । অনুরুপ জায়গায় চায়ের নার্সারীও ভালভাবে করা সম্ভব।
(৫) ড্রেনেজঃ সুনিষ্কাশিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা আছে, বৃষ্টির পানি বের হয়ে যাওয়ার জন্য আউটলেটের ব্যবস্থা আছে, এমন জায়গা নার্সারীর জন্য উপযুক্ত।
(৬) মৃত্তিকার গুনাগুনঃ নার্সারীর জন্য বেলে দোআঁশ মাটি উপযুক্ত । তবে বালির আধিক্য বেশী (৭০%-৯০%) এমন জায়গায় চা নার্সারী ভালভাবে করা সম্ভব নহে।
(৭) ক্যাটল ট্রেসপাসঃ নার্সারী এলাকায় গরু ছাগলের অবাধ বিচরণ রোগবালাই ছড়ানোসহ নানাবিধ সমস্যা তৈরি করে।
(৮) মুক্ত আলো-বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা আছে এমন জায়গা নার্সারীর জন্য খুবই উপযুক্ত।
জমি তৈরিঃ
(১) জংগল পরিস্কারঃ জংগল বা আগাছা থাকলে শিকড়সহ তুলে ফেলে পরিস্কার করতে হয়।
(২) জমি কর্ষণঃ প্রাইমারী বেড তৈরির ক্ষেত্রে ০-৯ ইঞ্চি পর্যন্ত মাটি কোদাল দ্বারা ওলটপালট করে কর্ষিতাবস্থার সৃষ্টি করতে হয়।
(৩) লেভেলিংঃ বেড তৈরির আগে মাটি ড্রেসিং করে লেভেল করা চাই।
ডিজাইন এবং লেআউটঃ
(১) প্রাইমারী বেডঃ মোট কাটিং এর পরিমান অনুযায়ী ৩ইঞ্চি x ৩ইঞ্চি স্পেসিং দিয়ে দিয়ে লাগানোর ক্ষেত্রে কতটি প্রাইমারী বেড লাগতে পারে তা নির্ধারণ করা ও স্টেকিং করা।
(২) কি পরিমাণ সেকেন্ডারী বেড দরকার হতে পারে তাও নির্ধারণ করা চাই।
(৩) ড্রেনের প্রশস্থতা, গভীরতা ও প্রয়োজনীয় পথের পরিমান স্টেকিং করা, মোট প্রয়োজনীয় কাটিংএর পরিমান ও রোপন দুরত্ব অনুযায়ী প্রতিটি বেডে কি পরিমান কাটিং লাগানো সম্ভব তাও নির্ধারণ করা চাই।
(৪) বীজ নার্সারীঃ এর ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পরিমান বীজের জন্য বেডের পরিমাণ নির্ধারণ ও প্রতিটি সিড বেডে কতটি গুটি বা বীজ লাগানো সম্ভব তাও নির্ধারণ করা দরকার।
(৫) প্রয়োজনীয় অন্যান্য বিষয় ও বিবেচনায় আনা।
প্রাইমারী বেড ও সেকেন্ডারী বেড তৈরিঃ
(১) ক্লোন নার্সারী বেড অর্থাৎ কাটিং লাগানোর বেড সর্বদাই উত্তর দক্ষিন দিক বরাবর তৈরি করতে হয়। প্রাইমারী বেড তৈরি করার সময় লক্ষ্য রাখা দরকার যেন সঠিক ভাবে দুরমুজ করা হয়।
(২) গুটি নার্সারীর বেড পূর্ব-পশ্চিম দিক বরাবর তৈরি করতে হয়।
(৩) প্রাইমারী বেড শীতকালে ফ্লাট/সমতল এবং বৃষ্টির মৌসুমে ওভাল বা উত্তল আকৃতির করে তৈরি করতে হয়।
(৪) সেকেন্ডারী বেড পূর্বদিকে সামান্য ২ ইঞ্চির মত স্লানটিং বা ঢালু করে তৈরি করতে হয়।
(৫) সেকেন্ডারী বেড এর উপর ১ ইঞ্চির মত বালির স্তর দিলে সহজে জলাবদ্ধতা এড়ানো যায়।
(৬) সাইড ড্রেন ৩০ সেমি. (১ফুট) প্রশস্থ ও ২৩ সেমি. (৯ইঞ্চি) গভীর করে তৈরি করা দরকার।
ওভারশেড তৈরিঃ
(১) নার্সারীর জন্য ওভারশেড তৈরি একটি অপরিহার্য বিষয়।
(২) প্রাইমারী বেডে ব্যবহৃত বাঁশের চাপ্টা এমনভাবে তৈরি করতে হয়, যাতে ২০-২৫% সূর্যালোক বেডে প্রবেশ করতে পারে ।
(৩) বাঁশের চাপ্টা ৫ ফুট x ৪ ফুট সাইজের হওয়া চাই। চাপ্টা এর থেকে বেশী লম্বা হলে রক্ষণাবেক্ষনে এ সমস্যা হওয়ায় চাপ্টা বেশদিন টেকসই হয় না । এইরুপ ১৩টি চাপ্টা দিয়ে ৫০ ফুট লম্বা একটি বেড ঢাকানো সম্ভব।
(৪) সরাসরি মাটিতে লাগানো বীজ নার্সারীর জন্য সবুজ ছায়া শস্য হিসাবে বগামেডিওলা প্রত্যেক বেডের বর্ডার বরাবর লাগানো যায়।
(৫) প্রাইমারী বেডে বাঁশের চাপ্টা ২৫-৩০ সে.মি. (১০-১২ ইঞ্চি) উঁচুতে (লোশেড হাইট) এবং সেকেন্ডারী বেডে বাঁশের চাপ্টা ড্রেন হতে ১৭৮ সে.মি. (৬ ফুট) উচুতে (হাই শেড হাইট স্থাপন করতে হয়।
(৬) সেকেন্ডারী বেডে বাঁশের চাপ্টা ছাড়াও কাঁশসন বা এগ্রোনেট ব্যবহার করা যায়।
মাটি সংগ্রহঃ
(১) বাঁশবাড়ী বা জংগলবাড়ি হতে সংগৃহিত মাটি, বা যে কোন পূনর্বাসন করা ঝুরঝুরে মাটি উত্তম।
(২) বেলে দোঁআশ মাটি উত্তম এবং এক্ষেত্রে টপ সয়েল ব্যাগ ভর্তির জন্য উত্তম।
(৩) ক্র্যাম্ভি স্ট্রাকচারড সয়েল ভাল ।
(৪) পিএইচ ৪.৫ হতে ৫.৫ হলে ভাল হয়।
(৫) মাটি সংগ্রহের জন্য উত্তম সময় হল শীতকাল।
(৬) ইলওয়ার্ম এর সংখ্যা ১০ গ্রাম মাটিতে ৭টির বেশী হলে ফুরাডান দিয়ে মাটি শোধন করে নেওয়া দরকার।
মাটি তৈরিঃ
(১) মাটি শুকনা ও পরিস্কার হওয়া দরকার।
(২) প্রয়োজনে মাটি ৩ মেসের চালুনী দ্বারা চেলে নেয়া যায়।
(৩) সয়েল ও গোবর এর অনুপাত ৪ঃ১ হওয়া দরকার।
(৪) ব্যাগ ভর্তির জন্য সংগৃহিত মাটি তৈরির সময় প্রতি কিউবিক মিটার মাটিতে ৫০০ গ্রাম টিএসপি সার ব্যবহার করা যায় ।
ব্যাগ ভর্তিঃ
(১) পলিব্যাগের সাইজ ০.০৪ মিমি থিকনেস x ১৫সে.মি. প্রশস্থ x ২২ সে.মি. লম্বা অথবা ০.০৪ মিমি x ১২.৫ সে.মি. x ২০ সে.মি. আকারের পলিব্যাগ ব্যবহার করা যায়।
(২) ব্যাগ ভর্তির পূর্বে মাটি শুকনা হলে কিছুটা আর্দ্র করে নেয়া দরকার । কাটিং ট্রান্সফারের অন্তত ১৫-১৬ দিন আগে ব্যাগ ভর্তি করে রাখলে, ও মাঝে মাঝে পানি দিলে মাটি সেটিং হওয়া সহ অবাঞ্জিত আগাছা বীজ জন্মানোর সুযোগ হয় যা পলিব্যাগে কাটিং বসানোর সময় সহজভাবে দুরিভুত করা সম্ভব হয় ।
(৩) তৈরিকৃত মাটি দ্বারা ব্যাগ ভর্তির সময় ব্যাগের উপরাংশে ৫ সে.মি. খালি রেখে পরবর্তীতে সাবসয়েল দ্বারা ভর্তি করা দরকার এতে কাটিং হতে শিকড় বেড় হওয়ার পর গোবর ও সার মিশ্রিত মাটি নিচের দিকে থাকায় শিকড় নিম্নমুখী হয়, যাহা কাম্য ।
(৪) রংগিন পলিথিন তাপ শোষন করে দ্রুত গরম হয় ফলে ব্যাগের মাটি তাড়াতাড়ি শুকায়ে যায়, এইজন্য পলিব্যাগ হিসাবে রংগিন পলিথিন ব্যবহার না করাই ভাল ।
(৭) পলিথিন টিউব বসানোর সময় ত্রিকোনাকার সিস্টেমে বসালে ব্যাগের মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গার পরিমান সহজেই কমানো যায়, এতে সামগ্রীকভাবে নার্সারীর বেডকে শুকিয়ে যাওয়ার হাত হতে রক্ষা করা যায় ।
কাটিং তৈরি ও রোপণ
শুট সংগ্রহঃ
(১) নিউক্লিয়াস ক্লোন প্লট হতে স্ট্যান্ডার্ড শুট সংগ্রহের পরপরই আর্দ্র শীতল ছায়াময় জায়গায় রাখতে হয় ও মাঝে মাঝে পানি দেয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হয় ।
(২) আধা শক্ত আধা বাদামী ডাল বা শুট কাটিং সংগ্রহের এর জন্য উপযুক্ত ।
(৩) কাটিং সর্বদাই প্রাইমারী শুট হতে সংগ্রহ করতে হয়। সেকেন্ডারী বা টারশিয়ারী শুট হতে সংগৃহীত কাটিং কখনই ভাল হয় না ।
(৪) শুট সংগ্রহের উপযুক্ত সময় হল সকাল অথবা বিকাল ।
(৫) মাদারবুশ হতে শুট সংগ্রহের জন্য ধারালো দা ব্যবহার করতে হয় ।
কাটিং তৈরিঃ
(১) সুপ্ত কুড়ি সম্পন্ন ডাল হতে কাটিং সংগ্রহ করতে হয় ।
(২) কাটিং এর কুঁড়িটিকে রক্ষা করতে যতটুকু উপরে কাটতে হয়, ঠিক অতটুকু উপরে রেখে কাটা দরকার।
(৩) কাটিং এর দৈর্ঘ্য মধ্যপর্বের দৈর্ঘ্যরে উপর নির্ভর করে । একটি আদর্শ কাটিং ২.৫-৩.০ সে.মি. লম্বা হওয়া দরকার।
(৪) নার্সারীর জন্য কাটিং সংগ্রহের উপযুক্ত সময় হল এপ্রিল/মে এবং সেপ্টেম্বর/অক্টোবর।
কাটিং সংরক্ষণঃ
(১) সংগৃহিত কাটিং বোল বা গামলায় ভিজা সিক্ত অবস্থায় সাময়িকভাবে সংরক্ষণ করে রাখা যায়। পরিবহন করে দুরে নেয়ার ক্ষেত্রে সংগৃহীত কাটিং ভিজা সিক্ত চটের বস্তা অথবা ছিদ্রযুক্ত পলিথিন ব্যাগে ভিজাসিক্ত অবস্থায় পরিবহন করে নেয়া যায় । এভাবে সংগৃহীত কাটিং সর্বোচ্চ ৭২ ঘন্টা পর্যন্ত সংরক্ষণ করে লাগানো যায়।
কাটিং রোপনঃ
(১) যদিও কাটিং সংগ্রহের পর হতে সর্বোচ্চ ৭২ ঘন্টা পর্যন্ত লাগানো যায়, উত্তম হল সংগৃহীত কাটিং যথাসম্ভব দ্রুত লাগানো ।
(২) কাটিং লাগানোর আগে ২% ফানজিসাইডে শোধন করে নেয়া ভাল ।
(৩) কাটিং লাগানোর উত্তম সময় হল সকাল অথবা বিকাল ।
(৪) সরাসরি পলিব্যাগে লাগানোর ক্ষেত্রে বিশেষ করে প্রয়োজন পরিমান পানি প্রদানসহ সহ অন্যান্য বিষয়ে সতর্ক থাকতে হয়।
(৫) কাটিং লাগানোর সময় দৃঢ়ভাবে স্থাপন করতে হয়, লক্ষ্য রাখতে হয় যেন কোন এয়ার পকেট না থাকে ।
(৬) কাটিং এমনভাবে লাগাতে হয় যেন কাটিং এর বোটা বা পেটিওল মাটির ওপরে থাকে। বোটা মাটির নিচে গেলে পঁচে যেতে পারে ।
(৭) ক্লোন নার্সারী বেড সর্বদাই উত্তর-দক্ষিণ বরাবর লাগাতে হয়।
(৮) তৈরি বেড শুকনা হলে কাটিং লাগানোর পূর্র্বে অবশ্যই পানি দ্বারা সিক্ত করে নিতে হবে।
(৯) কাটিং ৩ইঞ্চি x ৩ইঞ্চি স্পেসিং দিয়ে লাগাতে হয়।
কাটিং স্থানান্তরঃ
(১) বেডে লাগানো কাটিং এর নিম্নাংশে ক্যালাসিং হচ্ছে কি না তা পর্যবেক্ষণ করা, এর জন্য ৬-১০ সপ্তাহ সময় লাগে ।
(২) শুট এর বৃদ্ধি ৭-১০ সে.মি. তথা ৩-৪ পাতা এবং একই সাথে শিকড়ের বৃদ্ধি ২-৩ সেমি হলে পলিব্যাগে নেয়ার উপযুক্ত হয়েছে বলে ধরে নেয়া হয়। সাধারণত এতে ৪-৬ মাস সময় লাগে।
(৩) লোহার তৈরি ফর্মা দিয়ে প্রাইমারি বেড হতে কাটিং এমনভাবে ট্রান্সফার করতে হয় যেন কাটিং এর গোড়ার মাটি বল /ভেটি/পিন্ডি না ভাংগে ।
(৪) ভেটি ভেংগে গেলে শিকড় ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় উক্ত কাটিংকে ব্যাগে টিকানো কঠিন হয়ে পড়ে। পুনঃবৃদ্ধি দেরীতে শুরু হয়।
মেইনটিন্যান্সঃ
(১) নিয়মিত পানি দেয়া দরকার।
(২) বেড অথবা ব্যাগ হতে মাটি ওয়াস আউট হলে সাথে সাথে পুনরায় মাটি দিয়ে সমান করে দেয়া দরকার ।
(৩) প্রয়োজন মাফিক উইডিং করা দরকার ।
(৪) অ্যালজি বা মস হলে, বা হার্ড ক্রাস্ট তৈরি হলে বাঁশের কাঠি দিয়ে হ্যান্ড ফর্কিং করে দুর করা যায়।
(৫) প্রাইমারী বেডের ড্রেনে অতিরিক্ত পানি যাতে কোন অবস্থাতেই জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে ।
(৬) প্রাইমারী বেডে ডাইব্যাকের আক্রমণ হতে পারে, উঁইপোকার আক্রমণ হতে পারে, এছাড়া উড়চুংগা পোকা কাটিং এর গোড়া কেটে দিতে পারে । শেডের অপ্রতুলতার কারণে লালমাকড়ের আক্রমণ হতে পারে, মাকড় দমনের জন্য মাইটিসাইড ব্যবহার করতে হবে ।
(৭) ক্লাব ক্যালাসিং এর কারণ হলো অতিরিক্ত মৃত্তিকা পিএইচ, ওভার ওয়াটারিং, অতিরিক্ত অরগানিক ম্যাটার, ওভার শেড, ক্লেই সয়েল। এটি প্রতিকারের উপায় হলো মৃত্তিকা পিএইচ কমানো, প্রয়োজনমাফিক ওয়াটারিং করা, প্রয়োজনমাফিক অরগানিক ম্যাটার ব্যবহার করা , শেড কন্ট্রোল করা, ক্লেই সয়েল ওয়াটারিং যাতে বেশী না হয়।
(৮) ফ্রি ফ্লাওয়ারিং সাধারণত অক্টোবার ও নভেম্বার মাসে সংগৃহিত কাটিং যা মাতৃপত্র ঝরে পড়া কাটিং এর কান্ড প্রাইমারীবেড সঠিকভাবে দুরমুজ না করেই রোপন করা, পত্রবোটাসহ কাটিং মাটির ভিতরে স্থাপন করা, সংগৃহীত কাটিং অহেতুক দেরী করে রোপন করা ।
হার্ডেনিংঃ
চা চারা রোপনের পূর্বে মাঠে রোপন উপযোগী করার জন্য হার্ডেনিং বা চারা শক্ত করে নেয়া একটা অত্যন্ত গুরুত্ব পূর্ণ প্রক্রিয়া । এইজন্য চা চারা রোপনের দেড় হতে দুই মাস পূর্বে শেড উম্মুক্ত করে চারা হার্ডেনিং করে নিতে হয় ।
বীজ নার্সারী
প্রাকৃতিক পরাগায়ণের মাধ্যমে সৃষ্ট বীজ থেকেই চায়ের বংশবিস্তার একটি প্রাচীন আবাদ পদ্ধতি। বীজ থেকে চারা তৈরি করা সহজ। তবে বিটিআরআই অনুমোদিত উন্নতজাতের বীজ থেকে চারা তৈরি করা উচিত।
বীজ সংগ্রহঃ
চা বীজ নিজস্ব বীজবাড়ি (গুটিবাড়ি) হতে বীজ পরিপক্কতার উপর অক্টোবর হতে ডিসেম্বর পর্যন্ত সংগ্রহ করা যায়। শুধুমাত্র অনুমোদিত চা বাগান হতে বীজ সংগ্রহ করতে হবে। যেহেতু খুব তাড়াতাড়ি চা বীজের অঙ্কুরোদ্গম ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়, তাই বীজ সংগ্রহের পর বাছাইয়ের পরই ভাল বীজ যত দ্রুত সম্ভব প্রথমে বীজঘরে সংরক্ষণ ও অঙ্কুরোদগমের জন্য পরিষ্কার ও অল্প ভেজা বালুর গাঁদায় রাখতে হবে।
বীজতলা তৈরিঃ
বীজতলার জমি ৩০ সেমি (১ ফুট) গভীরে চেষে নরম করে ও আগাছা পরিষ্কার করে নিতে হবে। এরপর পরিকল্পনা অনুযায়ী বীজতলা বা বেড তৈরি করতে হবে। ১২০ সেমি -১৫০ সেমি (৪-৫ ফুট) চওড়া এবং যে কোন সুবিধাজনক দৈর্ঘের বেড তৈরি করা যায়। তবে কাজের সুবিধার্থে বেডের পাশ যেন ১৫০ সেমি (৫ ফুট) এর বেশি না হয়। ৩০ মি x ১.৫ মি (৯৮ ফুট x ৫ ফুট) আকারের একটি বেডে ২০ সেমি x ২০সেমি ত্রিভুজাকৃতি ব্যবধানে প্রায় ১,৩০০ বীজ (প্রায় ৪ কেজি) লাগানো যায়। পানি নিষ্কাশনের জন্য বেডে চারদিকে ৩০ সেমি (১ ফুট) চওড়া ও ২০-২২ সেমি (৯ ইঞ্চি) গভীর নালা কেটে দিতে হবে। নার্সারীর চারদিকেও গভীর নালা রাখতে হবে যেন বর্ষায় পানি না জমে।
বীজতলায় বীজ বপনঃ
সংগৃহীত বীজ বীজঘরে বালুতে রাখার পর মাঝে মাঝে পরিমাণ মত পানি দিতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন খুব বেশি পানি না দেওয়া হয়। এতে বীজ পচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না। বালুতে রাখার ৭/৮ দিন পর পর অঙ্কুরিত বা ফেটে যাওয়া বীজ নার্সারীতে লাগাতে হবে। বেডে আঙ্গুল বা অনুরুপ শক্ত কাঠি দিয়ে চেপে অল্প গর্ত করে বীজের চোখগুলো মাটির নিচের দিকে রেখে এমনভাবে বীজ লাগাতে হবে যেন বীজ ১.০-১.৫ সেমি অর্থাৎ আধা ইঞ্চি মাটির নিচে থাকে। তারপর হালকাভাবে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। বীজ বপনের পর বীজতলা শুকনো ছন বা ঘাসপাতা দিয়ে হালকা করে ঢেকে দিতে হবে। বেড শুকিয়ে আসলে মাঝেমধ্যে পানি দিতে হবে। বীজতলা সম্পুর্ন আগাছামুক্ত রাখতে হবে। চা বীজ সরাসরি পলিথিনের বিকল্প উপযোগী ও অনুমোদিত উপকরণের ব্যাগেও লাগানো যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে ১৫ সেমি x ১৫ সেমি (৬ x ৬ ইঞ্চি) মাপের ব্যাগে ৪ ভাগ মাটির সঙ্গে ১ ভাগ পচা শুকনা গোবর ভালভাবে মিশিয়ে ব্যাগ ভর্তি করে বীজ রোপণ করতে হবে।
বীজতলায় ছায়া প্রদানঃ
বীজতলায় ছায়া প্রদান আবশ্যক। প্রতিটি বেডে ৬০-৭০ সেমি (২-২.৫ ফুট) উঁচুতে ছন বা বাঁশের চাপ্টা দিয়ে ছায়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এরুপ সরাসরি রোপণযোগ্য নার্সারির জন্য ১৫০-১৮০ সেমি (৫-৬ ফুট) উঁচুতে শেডের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এছাড়া ব্যায় কমানোর জন্য বাঁশের শেডের পরিবর্তে প্রতি বেড অন্তর বগামেডুলা গ্রীন ক্রপের সারি তৈরি করেও ছায়াদান নিশ্চিত করা যেতে পারে।
বীজতলায় সার প্রয়োগঃ
বীজ নার্সারীর চারার বৃদ্ধি ও সজীবতার জন্য রাসায়নিক সার (ইউরিয়া, টিএসপি ও এমওপি) ২ঃ১ঃ২ অনুপাতে প্রয়োগ করা যেতে পারে। সারের পরিমাণ ও প্রয়োগবিধি নিচে দেয়া হলঃ
ইউরিয়া ৪ কেজি + টিএসপি ২ কেজি + এমওপি ৪ কেজি = মোট ১০ কেজির সাথে শুকনো বালু ৯০ কেজি সর্বমোট ১০০ কেজির মিশ্রণ তৈরি করে উক্ত মিশ্রণ থেকে ১ কেজি করে ৩০ সেমি x ১.৫ মি বেডে ১৫ দিন পর পর মোট ১০ বার প্রয়োগ করা যেতে পারে। নার্সারিতে চারাগুলো ৪/৫ পাতা হওয়ার পর সার প্রয়োগ করতে হবে। পলিব্যাগের ক্ষেত্রে, ১ চা চামচ পরিমাণ সার ও বালুর মিশ্রণ প্রতি ব্যাগে ১৫ দিন পর পর ৮/১০ বার প্রয়োগ করা যাবে।
ছায়াতরু নার্সারী
চা বাগানে ছায়াগাছ উত্তোলন একটি অবিচ্ছেদ্য প্রক্রিয়া। বিটিআরআই অনুমোদিত যেমন- কালশিরিষ (আলবিজিয়া অডোরাটিসিমা), শীল কড়ই (আলবিজিয়া লেবেক), লোহা শিরীষ (ডেরিস রোবাস্টা) প্রজাতির স্থায়ী ছায়াগাছ হিসেবে নার্সারী চারা তৈরি পুর্বক চা বাগানে লাগানো যায়। সাধারণত নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে বীজ সংগ্রহ পূর্বক ছায়াগাছের চারা উত্তোলন করতে হয়।
নার্সারীতে ব্যাগে স্থায়ী ছায়াগাছের চারা তৈরিঃ
চায়ের মাটির মত নার্সারী ব্যাগে ছায়াগাছের জন্য মাটি ভরাট করতে হয়। ৩০ সেমি লম্বা ৩০০ গেজ মোটা অনুমোদিত পলিথিনের দুই মুখ খোলা ব্যাগও ব্যবহার করা যায়। প্রতি ব্যাগে ৩টি বীজ রোপণ করতে হবে। চারাগুলি ১০-১৫ সেমি লম্বা হওয়ার পর ১টি চারা রেখে বাকীগুলো উঠিয়ে ফেলতে হবে।
প্রাথমিক বেডে স্থায়ী ছায়াগাছের চারা তৈরিঃ
উপযুক্ত স্থানে প্রথমে ভালভাবে চাষ করে জমি তৈরি করতে হবে। মার্চ/এপ্রিল মাসে ৩০ সেমি দূরে সারি করে ৮ সেমি দূরত্বে এবং ১.২৫ সেমি মাটির নিচে স্থায়ী ছায়াগাছের বীজ বুনতে হবে, এরপর চারা কিছুটা বড় হলে সারির ভিতর ৩২ সেমি ব্যবধানের চারাগুলো রেখে বাকীগুলো উঠিয়ে ফেলতে হবে। মাঝে মাঝে পানি সিঞ্চন ও আগাছে পরিষ্কার করতে হবে। ১-১.৫ বৎসরের মধ্যে চারা মাঠে রোপণের ব্যবস্থা করতে হবে
|
|