স্বাস্থ্যরক্ষায় চা
চা বর্তমান বিশ্বের সর্বাধিক জনপ্রিয় নির্দোষ সস্তা পানীয়। সকাল কিংবা বিকেলে এক কাপ চা না হলে যেন দিনই কাটে না। তাই শরীর অ মনকে চাঙ্গা করতে চায় এক কাপ ধূমায়িত চা। এক কিলোগ্রাম কাল চা দিয়ে ৪০০ কাপ পানীয় চা বানানো যায়। সে হিসেবে এক কাপ চা বানাতে ২.৫ গ্রাম কাল চা লাগে। এক কাপ চা বানাতে পানি লাগে ১৫০ মিলি। অভ্যান বশতঃ এক কাপ চায়ে ২ টেবিল চামচ পরিমান দুধ এবং ১ চা চামচ চিনিই যথেষ্ট। এসব মিলিয়ে এক কাপ চা থেকে ৪২ কিলো ক্যালোরি শক্তি পাওয়া যায়। আর শুধু লিকার পান করলে কোন শক্তিই পাওয়া যায় না। তবে চায়ের প্রধান দু'টি উপাদান ক্যাফেইন এবং ট্যানিন ছাড়াও ১ মিলিগ্রাম রাইবোফ্লাবিন, ৭.৫ মিলিগ্রাম নিকোটিনিক এসিড, এবং ২.৫ মিলিগ্রাম প্যান্টোথেনিক এসিড পাওয়া যায়।
এখন এই এক কাপ ধোঁয়া ওঠা চা কি শুধুই অভ্যাসবশত কিংবা স্বাদের জন্য খাওয়া? নাকি এর স্বাস্থ্য উপকারিতাও আছে? চলুন জেনে নেই। চীন দেশের লোকেরা খ্রিস্টের জন্মের দু’হাজার বছর আগে থেকেই চা এর সবুজ তরতাজা পাতাকে জলে সেদ্ধ করে ওষুধ হিসেবে পান করতেন। তারই সূত্রধরে আধুনিক এ সভ্যতার যুগে গবেষণায় বেরিয়ে আসছে চায়ের নানা অজানা তথ্য। দেশ বিদেশের বিভিন্ন গবেষণায়ও বেরিয়ে আসছে চায়ের স্বাস্থ্যগত নানাদিক। কয়েক বছর আগে এক গবেষণায় দেখা গেছে, চায়ের মধ্যে ট্যানিন নামের যে উপাদান রয়েছে, তা খাদ্যনালির (গলার) ক্যানসারের একটি কারণ হতে পারে। আর চুলায় চা পাতা ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্বাল দিলে চায়ের ট্যানিন বেশি বের হয়। সাধারণ চায়ের দোকানে এ রকম করা হয়। এই চায়ে কিছু দুধ দরকার। কারণ, দুধ চায়ের ট্যানিনকে আঁকড়ে ধরে এবং তাকে শরীরে মিশতে দেয় না। এ জন্য বেশি জ্বালের চায়ের ক্ষেত্রে দুধ মেশালে উপকার পাওয়া যেতে পারে। আর সাম্প্রতিক গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, হালকা জ্বালের রং চা-ই স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
চায়ের অন্যতম উপাদান হলো ক্যাফেইন ও পলিফেনেল। এক কাপ চায়ে ৬৪ মি. গ্রা. ক্যাফেইন থাকে। ক্যাফেইন কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে উজ্জীবিত করে। ফলে শরীর ও মন চাঙ্গা হয়। এটি মানসিক সচেতনতা বৃদ্ধি করে, অবসাদ, ক্লান্তি দূর করে ও শরীরের রক্ত সঞ্চালনকে উন্নত করে। এটি পাকস্থলির অম্লতা কমাতেও সাহায্য করে। পলিফেনল মূলত ক্যাটেচিন, থিয়াফ্লাভিন, থিয়ারুবিজিন ও অন্যান্য ফ্লাভোনয়েডের সমন্বয়ে গঠিত জৈব-রাসায়নিক উপাদান। চায়ের পলিফেনলই মূলত এন্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। এক কাপ চায়ে ১২৮ মি. গ্রা. পলিফেনল থাকে। চায়ের মূল উপাদানের ৪০ ভাগই পলিফেনল। চায়ের পলিফেনল তথা ফ্লাভোনয়েড এন্টি-অক্সিডেন্টের অন্যতম উৎস। এটি শরীরের কোলেস্টরল নিয়ন্ত্রণে রাখে। হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। এমনকি করোনারি থ্রম্বোসিসসহ অন্যান্য কার্ডিওভাস্কুলার রোগের ঝুঁকি কমায়। নিয়মিত চা পানে ব্লাড, ফুসফুস ও ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায়। চায়ের ফ্লাভোনয়েড ও মাইরিসেটিন কৃত্রিম ইনসুলিন হিসেবে কাজ করে রক্তে গ্লুুকোজ নিয়ন্ত্রণ করে। অর্থাৎ চা ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
চা দাঁতের স্বাস্থ্য রক্ষার উপাদান ফ্লোরাইডের অন্যতম প্রাকৃতিক উৎস। এক কাপ চায়ে এক মি. গ্রা. ফ্লোরাইড থাকে যা সুস্থ দাঁতের জন্য দরকারি। চা মুখের ক্ষতিকর স্ট্রেপটোকক্কাস নামক ব্যাকটেরিয়া ও ক্যানডিডা নামক ছত্রাক কমাতে সাহায্য করে। অর্থাৎ চা মুখের স্বাস্থ্য রক্ষায়ও বিশেষ ভূমিকা পালন করে। চা শরীরের বার্ধক্য রোগ প্রতিরোধ করে মানবদেহের উন্নতি সাধন করে থাকে। সবুজ চায়ের ইপিগ্যালোক্যাটেচিন গ্যালেট এইডস রোগের জীবাণু এইচআইভি বাইন্ডিং এ বাধা প্রদান করে। তাই বলা যায় যে, নিয়মিত চা পানে মানবদেহের গুরুত্বপূর্ণ রোগসমুহ নিয়ন্ত্রণে থাকে ও জীবনের মান উন্নয়ন হয়। তাই এই গুরুত্বপূর্ণ পানীয় চা ছাড়া যেন আমাদের দিনই কাটেনা। চা এখন আমাদের নিত্য সঙ্গী। চাঙ্গা করে শরীর ও মন দু’টিই। এক কাপ চা ই হোক ভালবাসার অনন্য প্রতীক। চা দীর্ঘজীবি হউক।
চা ও সঞ্জীবনী শক্তি
চায়ে যথেষ্ট পরিমাণে ক্যাফেইন বিদ্যমান । ক্যাফেইন হচ্ছে সাইকোঅ্যাকটিভ স্টিমুল্যান্ট যা আন্তঃকোষীয় রক্তচাপ, রক্তের সুগার লেভেল এবং আন্ত্রিক গ্যাস্ট্রিক রস নিঃসরণের মাধ্যমে অ্যালার্টনেস বৃদ্ধি করে মনকে চাঙ্গা ও সজীব করে।
চা ও ডায়বেটিস
EGCG হচ্ছে সবচাইতে সক্রিয় কার্যকরী ক্যাটেকিন যা গ্লুকোজ টলারেন্স (সহনশিলতা) এবং ইনসুলিন সেন্সিটিভিটি (স্পর্শকাতরতা) বাড়িয়ে দেয় । ফলশ্রুতিতে দেহের কোষ বেশি পরিমাণে গ্লুকোজ গ্রহণ করতে পারে। আর এভাবেই গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।
চা ও স্ট্রোক
২০০৯ সালে International Stroke Conference এ উপস্থাপিত এক গবেষণায় দেখা যায় দৈনিক ৩-৫ কাপ চা যদি পান করা যায় তাহলে স্ট্রোক সংঘটিত হওয়ার সম্ভাবনা শতকরা ২১ ভাগ কমে যায়। এই গবেষণাটি চালনা করা হয় লস এ্যান্জেলস-এর ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। গবেষণায় আরো দেখা যায় স্ট্রোক কমানর জন্য যে উপাদানটি দায়ি তা হচ্ছে L-theanine. এই উপাদানটি রক্তের স্বাভাবিক প্রবাহ বজায় রাখে।
চা ও দাতঁ সুরক্ষা
চা এ যথেষ্ট পরিমাণে ফ্লুরাইড বিদ্যমান থাকে যা দাতেঁর এনামেলের রেজিস্ট্যান্স ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। ফলে দন্তক্ষয় হ্রাস পায় এবং এন্টি ইনফ্ল্যামেটরী ধর্ম প্রদর্শণের মাধ্যমে দাতেঁ জিনজিভাইটিস হওয়ার প্রবণতা কমে যায়। চায়ের অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল ধর্ম দাতেঁ যাতে ক্যারিস (cavities) না হয় তার অনুঘটক হিসেবে কাজ করে।
চা এবং ওজন হ্রাস
চায়ে বিদ্যমান ক্যাটেচিন আন্ত্রিক কোষীয় বিপাক প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে পারে নিম্নোক্তভাবে:
চা ও ক্যান্সার
গবেষণা লব্ধ ফলাফল স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান করে যে চায়ে বিদ্যমান বিভিন্ন ক্যাটেকিন বিশেষভাবে EGCG এর এমন রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতা আছে যে ক্যান্সার কোষ সৃষ্টি হওয়ার বিভিন্ন ধাপ (যেমন: কোষ সৃষ্টির ধাপ, কোষ সৃষ্টির বিস্তরণ ধাপ প্রভৃতি) কে বাধাঁ দিতে পারে।
চা ও কার্ডিও ভাস্কুলার (হৃৎপিন্ডসম্বন্ধীয়) রোগ
চায়ের উপজাত
অ্যালকোহলের সাথে চা পান বিশ্ববাজারে অ্যালকোহল মিশ্রিত পানীয় চা এবং শেরি হিসেবে চা বিক্রিত হয়। শ্রীলংকা চা গবেষণা ইনস্টিটিউট শতকরা ১০ ভাগ অ্যালকোহলযুক্ত একজাতীয় চা জাত পানীয় উদ্ভাবন করেছে। চীন, জাপান, কোরিয়া, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে স্বাস্থ্যকর কিছু বহুল প্রচলিত যেমন- সবুজ চা থেকে তৈরি 'ক্যাটেকিন পিল', সদ্য তোলা সবুজ চা পাতা সবজি হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। সবুজ চায়ের পাউডার থেকে নুডুলস, চাল, এবং রুটি ও টুথপেস্ট তৈরি করা হয়। চায়ের নির্যাস এবং ক্যাটেকিন নির্যাস পানীয় (ড্রিংস) হিসেবে ব্যবহার করা ছাড়াও চুইংগাম, ল্যাক্সেটিভ, আইসক্রিম, বিস্কুট, কেক, ক্যান্ডি, মাউথ-ওয়াশ, ডিওডোরেন্ট, সাবান ও প্রসাধনী হিসেবে ব্যবহৃত হয়। চা'কে পুনরায় প্রক্রিয়াজাত করে মিষ্টি, জ্যাম এবং জেলি তৈরি করা হয়। ঔষধ শিল্পে চায়ের ব্যবহার প্রচুর ও সম্ভাবনাময়। বিশ্বে বহুল ব্যবহৃত ঔষধ যেমন- চায়ের ক্যাটিকিন ট্যাবলেট, গ্রীন টি ট্যাবলেট, ক্যাটেকিন ১০০, ক্যাটেকিন ১০০ প্লাস অলিগো, ক্যাটেকিন ৫০, ক্যাটেকিন এসিই বিভিন্ন দেশে ব্যবহৃত হচ্ছে।
চা বর্তমান বিশ্বের সর্বাধিক জনপ্রিয় নির্দোষ সস্তা পানীয়। সকাল কিংবা বিকেলে এক কাপ চা না হলে যেন দিনই কাটে না। তাই শরীর অ মনকে চাঙ্গা করতে চায় এক কাপ ধূমায়িত চা। এক কিলোগ্রাম কাল চা দিয়ে ৪০০ কাপ পানীয় চা বানানো যায়। সে হিসেবে এক কাপ চা বানাতে ২.৫ গ্রাম কাল চা লাগে। এক কাপ চা বানাতে পানি লাগে ১৫০ মিলি। অভ্যান বশতঃ এক কাপ চায়ে ২ টেবিল চামচ পরিমান দুধ এবং ১ চা চামচ চিনিই যথেষ্ট। এসব মিলিয়ে এক কাপ চা থেকে ৪২ কিলো ক্যালোরি শক্তি পাওয়া যায়। আর শুধু লিকার পান করলে কোন শক্তিই পাওয়া যায় না। তবে চায়ের প্রধান দু'টি উপাদান ক্যাফেইন এবং ট্যানিন ছাড়াও ১ মিলিগ্রাম রাইবোফ্লাবিন, ৭.৫ মিলিগ্রাম নিকোটিনিক এসিড, এবং ২.৫ মিলিগ্রাম প্যান্টোথেনিক এসিড পাওয়া যায়।
এখন এই এক কাপ ধোঁয়া ওঠা চা কি শুধুই অভ্যাসবশত কিংবা স্বাদের জন্য খাওয়া? নাকি এর স্বাস্থ্য উপকারিতাও আছে? চলুন জেনে নেই। চীন দেশের লোকেরা খ্রিস্টের জন্মের দু’হাজার বছর আগে থেকেই চা এর সবুজ তরতাজা পাতাকে জলে সেদ্ধ করে ওষুধ হিসেবে পান করতেন। তারই সূত্রধরে আধুনিক এ সভ্যতার যুগে গবেষণায় বেরিয়ে আসছে চায়ের নানা অজানা তথ্য। দেশ বিদেশের বিভিন্ন গবেষণায়ও বেরিয়ে আসছে চায়ের স্বাস্থ্যগত নানাদিক। কয়েক বছর আগে এক গবেষণায় দেখা গেছে, চায়ের মধ্যে ট্যানিন নামের যে উপাদান রয়েছে, তা খাদ্যনালির (গলার) ক্যানসারের একটি কারণ হতে পারে। আর চুলায় চা পাতা ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্বাল দিলে চায়ের ট্যানিন বেশি বের হয়। সাধারণ চায়ের দোকানে এ রকম করা হয়। এই চায়ে কিছু দুধ দরকার। কারণ, দুধ চায়ের ট্যানিনকে আঁকড়ে ধরে এবং তাকে শরীরে মিশতে দেয় না। এ জন্য বেশি জ্বালের চায়ের ক্ষেত্রে দুধ মেশালে উপকার পাওয়া যেতে পারে। আর সাম্প্রতিক গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, হালকা জ্বালের রং চা-ই স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
চায়ের অন্যতম উপাদান হলো ক্যাফেইন ও পলিফেনেল। এক কাপ চায়ে ৬৪ মি. গ্রা. ক্যাফেইন থাকে। ক্যাফেইন কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে উজ্জীবিত করে। ফলে শরীর ও মন চাঙ্গা হয়। এটি মানসিক সচেতনতা বৃদ্ধি করে, অবসাদ, ক্লান্তি দূর করে ও শরীরের রক্ত সঞ্চালনকে উন্নত করে। এটি পাকস্থলির অম্লতা কমাতেও সাহায্য করে। পলিফেনল মূলত ক্যাটেচিন, থিয়াফ্লাভিন, থিয়ারুবিজিন ও অন্যান্য ফ্লাভোনয়েডের সমন্বয়ে গঠিত জৈব-রাসায়নিক উপাদান। চায়ের পলিফেনলই মূলত এন্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। এক কাপ চায়ে ১২৮ মি. গ্রা. পলিফেনল থাকে। চায়ের মূল উপাদানের ৪০ ভাগই পলিফেনল। চায়ের পলিফেনল তথা ফ্লাভোনয়েড এন্টি-অক্সিডেন্টের অন্যতম উৎস। এটি শরীরের কোলেস্টরল নিয়ন্ত্রণে রাখে। হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। এমনকি করোনারি থ্রম্বোসিসসহ অন্যান্য কার্ডিওভাস্কুলার রোগের ঝুঁকি কমায়। নিয়মিত চা পানে ব্লাড, ফুসফুস ও ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায়। চায়ের ফ্লাভোনয়েড ও মাইরিসেটিন কৃত্রিম ইনসুলিন হিসেবে কাজ করে রক্তে গ্লুুকোজ নিয়ন্ত্রণ করে। অর্থাৎ চা ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
চা দাঁতের স্বাস্থ্য রক্ষার উপাদান ফ্লোরাইডের অন্যতম প্রাকৃতিক উৎস। এক কাপ চায়ে এক মি. গ্রা. ফ্লোরাইড থাকে যা সুস্থ দাঁতের জন্য দরকারি। চা মুখের ক্ষতিকর স্ট্রেপটোকক্কাস নামক ব্যাকটেরিয়া ও ক্যানডিডা নামক ছত্রাক কমাতে সাহায্য করে। অর্থাৎ চা মুখের স্বাস্থ্য রক্ষায়ও বিশেষ ভূমিকা পালন করে। চা শরীরের বার্ধক্য রোগ প্রতিরোধ করে মানবদেহের উন্নতি সাধন করে থাকে। সবুজ চায়ের ইপিগ্যালোক্যাটেচিন গ্যালেট এইডস রোগের জীবাণু এইচআইভি বাইন্ডিং এ বাধা প্রদান করে। তাই বলা যায় যে, নিয়মিত চা পানে মানবদেহের গুরুত্বপূর্ণ রোগসমুহ নিয়ন্ত্রণে থাকে ও জীবনের মান উন্নয়ন হয়। তাই এই গুরুত্বপূর্ণ পানীয় চা ছাড়া যেন আমাদের দিনই কাটেনা। চা এখন আমাদের নিত্য সঙ্গী। চাঙ্গা করে শরীর ও মন দু’টিই। এক কাপ চা ই হোক ভালবাসার অনন্য প্রতীক। চা দীর্ঘজীবি হউক।
চা ও সঞ্জীবনী শক্তি
চায়ে যথেষ্ট পরিমাণে ক্যাফেইন বিদ্যমান । ক্যাফেইন হচ্ছে সাইকোঅ্যাকটিভ স্টিমুল্যান্ট যা আন্তঃকোষীয় রক্তচাপ, রক্তের সুগার লেভেল এবং আন্ত্রিক গ্যাস্ট্রিক রস নিঃসরণের মাধ্যমে অ্যালার্টনেস বৃদ্ধি করে মনকে চাঙ্গা ও সজীব করে।
চা ও ডায়বেটিস
EGCG হচ্ছে সবচাইতে সক্রিয় কার্যকরী ক্যাটেকিন যা গ্লুকোজ টলারেন্স (সহনশিলতা) এবং ইনসুলিন সেন্সিটিভিটি (স্পর্শকাতরতা) বাড়িয়ে দেয় । ফলশ্রুতিতে দেহের কোষ বেশি পরিমাণে গ্লুকোজ গ্রহণ করতে পারে। আর এভাবেই গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।
চা ও স্ট্রোক
২০০৯ সালে International Stroke Conference এ উপস্থাপিত এক গবেষণায় দেখা যায় দৈনিক ৩-৫ কাপ চা যদি পান করা যায় তাহলে স্ট্রোক সংঘটিত হওয়ার সম্ভাবনা শতকরা ২১ ভাগ কমে যায়। এই গবেষণাটি চালনা করা হয় লস এ্যান্জেলস-এর ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। গবেষণায় আরো দেখা যায় স্ট্রোক কমানর জন্য যে উপাদানটি দায়ি তা হচ্ছে L-theanine. এই উপাদানটি রক্তের স্বাভাবিক প্রবাহ বজায় রাখে।
চা ও দাতঁ সুরক্ষা
চা এ যথেষ্ট পরিমাণে ফ্লুরাইড বিদ্যমান থাকে যা দাতেঁর এনামেলের রেজিস্ট্যান্স ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। ফলে দন্তক্ষয় হ্রাস পায় এবং এন্টি ইনফ্ল্যামেটরী ধর্ম প্রদর্শণের মাধ্যমে দাতেঁ জিনজিভাইটিস হওয়ার প্রবণতা কমে যায়। চায়ের অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল ধর্ম দাতেঁ যাতে ক্যারিস (cavities) না হয় তার অনুঘটক হিসেবে কাজ করে।
চা এবং ওজন হ্রাস
চায়ে বিদ্যমান ক্যাটেচিন আন্ত্রিক কোষীয় বিপাক প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে পারে নিম্নোক্তভাবে:
- আন্ত্রিক লাইপেজ এনজাইমের ক্রিয়াশীল প্রবণতাকে বাধাঁ দান করে
- চর্বি (fat) শোষণ কমিয়ে দেয়
- দেহ থেকে চর্বির নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়
- অন্ত্রে অযুগল প্রোটিনের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়
- থার্মোজেনেসিস ( দেহে তাপ উৎপাদন প্রক্রিয়া) বাড়িয়ে দেয়
- লিপোজেনিক এনজাইম কমিয়ে দেয়
- খাবারের প্রতি ইচ্ছাপ্রবণতা কমিয়ে দেয়
- লক্ষণীয় মাত্রায় (৪%) চায়ের নির্যাস শক্তিক্ষয় বাড়িয়ে দেয়
চা ও ক্যান্সার
গবেষণা লব্ধ ফলাফল স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান করে যে চায়ে বিদ্যমান বিভিন্ন ক্যাটেকিন বিশেষভাবে EGCG এর এমন রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতা আছে যে ক্যান্সার কোষ সৃষ্টি হওয়ার বিভিন্ন ধাপ (যেমন: কোষ সৃষ্টির ধাপ, কোষ সৃষ্টির বিস্তরণ ধাপ প্রভৃতি) কে বাধাঁ দিতে পারে।
- চায়ে বিদ্যমান ক্যাটেকিন শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা নিম্নোক্ত উপায়ে ক্যান্সার সৃষ্টিতে বাঁধা দেয়।
- ক্ষতিকর ফ্রি রেডিক্যাল (অতিরিক্ত ইলেক্ট্রন বহনকারী উপাদান) কোষকে ক্ষত করার পূর্বেই অপসারণ করে ফেলে।
- ক্যান্সার কোষের (টিউমার) পরিমাণ এবং আকৃতি কমিয়ে দেয় ।
- ক্যান্সার কোষ (টিউমার) সৃষ্টিতে বাধাঁ দেয়।
চা ও কার্ডিও ভাস্কুলার (হৃৎপিন্ডসম্বন্ধীয়) রোগ
- চা পান কার্ডিও ভাস্কুলার/করোনারী (হৃৎপিন্ডসম্বন্ধীয়) রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা শতকরা ৫৮ ভাগ কমিয়ে দেয়।
- যারা চা পান করে না তাদের চেয়ে যারা চা পান করে তাদের মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন (হার্ট অ্যাটাক) হওয়ার সম্ভাবনা শতকরা ৬৮ ভাগ কম থাকে।
- চাতে বিদ্যমান পলিফেনল অর্থাৎ ক্যাটেকিন LDL কোলেস্টেরল এর জারণ কমিয়ে দেয় যা পরিনামে আথেরোস্কেলোরিক প্লাক গঠনে বাধাঁ দেয়। তাই চা পানে হৃৎপিন্ডসম্বন্ধীয় রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
চায়ের উপজাত
অ্যালকোহলের সাথে চা পান বিশ্ববাজারে অ্যালকোহল মিশ্রিত পানীয় চা এবং শেরি হিসেবে চা বিক্রিত হয়। শ্রীলংকা চা গবেষণা ইনস্টিটিউট শতকরা ১০ ভাগ অ্যালকোহলযুক্ত একজাতীয় চা জাত পানীয় উদ্ভাবন করেছে। চীন, জাপান, কোরিয়া, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে স্বাস্থ্যকর কিছু বহুল প্রচলিত যেমন- সবুজ চা থেকে তৈরি 'ক্যাটেকিন পিল', সদ্য তোলা সবুজ চা পাতা সবজি হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। সবুজ চায়ের পাউডার থেকে নুডুলস, চাল, এবং রুটি ও টুথপেস্ট তৈরি করা হয়। চায়ের নির্যাস এবং ক্যাটেকিন নির্যাস পানীয় (ড্রিংস) হিসেবে ব্যবহার করা ছাড়াও চুইংগাম, ল্যাক্সেটিভ, আইসক্রিম, বিস্কুট, কেক, ক্যান্ডি, মাউথ-ওয়াশ, ডিওডোরেন্ট, সাবান ও প্রসাধনী হিসেবে ব্যবহৃত হয়। চা'কে পুনরায় প্রক্রিয়াজাত করে মিষ্টি, জ্যাম এবং জেলি তৈরি করা হয়। ঔষধ শিল্পে চায়ের ব্যবহার প্রচুর ও সম্ভাবনাময়। বিশ্বে বহুল ব্যবহৃত ঔষধ যেমন- চায়ের ক্যাটিকিন ট্যাবলেট, গ্রীন টি ট্যাবলেট, ক্যাটেকিন ১০০, ক্যাটেকিন ১০০ প্লাস অলিগো, ক্যাটেকিন ৫০, ক্যাটেকিন এসিই বিভিন্ন দেশে ব্যবহৃত হচ্ছে।
|
|